কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার খিরাই নদীতে পানি নেই। ফলে প্রায় ১ হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এটি দাউদকান্দি উপজেলার সর্ববৃহৎ নদী। এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার। নদীটি উপজেলার গোয়ালমারী এলাকা থেকে নৈয়াইর ভায়া চক্রতলা বাজার থেকে ভরণপাড়ার সাচার খালের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ নদীটি মেঘনা নদীর শাখা থেকে উৎপত্তি। অনেকে মেঘনা নদীর শাখা আবার কেউ স্থানীয় খিরাই নদী হিসেবে চেনেন এ নদীকে। এ নদীর বিভিন্ন অংশে পলিমাটি ভরাট ছাড়াও নদীর পাড়ের অনেকে নদীর অনেক অংশ দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। আবার কেউ কেউ নিজেদের সুবিধার্থে ছোট ছোট আইল দিয়ে মাছ চাষ কেউবা ফসলও চাষ করছে। কিছু কিছু অংশে কচুরিপানা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এক সময়ে এ নদীর যৌবন ছিল, জোয়ারের পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হতো নদের চারিপাশে। স্থানীয়রা নদীর কোল ঘেঁষে আপন মনে ফসল ফলাতেন কৃষক। জেলেরা নদী মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। আবার অনেকেই নদী নৌকা চালিয়ে জীবিকা উপার্জন করতেন। নদী এখন আর জোয়ার না আসায় অনেকেই পূর্বের পেশা পরিবর্তন করেছেন। এখন আর এ নদী পাল উড়ানো নৌকা দেখা যায় না। নদীটি পলিমাটিতে ভরাট হওয়ায় নদীতে জোয়ারও নেই ভাটাও নেই। নদী জোয়ার-ভাটা না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষক আগের মতো জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না। স্থানীয় কৃষক আবদুল কাদির বলেছেন, প্রায় ১৫ বছর হয় নদী জোয়ারের পানি আসে না। জোয়ারের পানি না আসায় কৃষক বর্ষার মৌসুমে নদী যে পানি আটকিয়ে থাকে অথবা মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলে বাসা-বাড়ির পানি নদী নেমে সেই পানির ওপরই ভরসা করে আমাদের কৃষি কাজ সারতে হয়। আবার অনেকেই নদীর পাড়ে ডিপ টিউবওয়েলের পানি দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। গোয়ালমারী গ্রামের শাহ আলম বলেছেন, খিরাই নদী এখন এ অঞ্চলের দুঃখগাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী পানি না থাকায় মৌসুমে ইরি, বোরোসহ অন্যান্য ফসলে আমরা পানি সেচ দিতে না পারায় ফসল ফলাতে পারছি না। নৈয়াইর গ্রামের কৃষক সাদেক বলেন, নদীটি খনন করা প্রয়োজন। নদীটি খনন করা হলে আবারও নদী জেয়ার-ভাটা চালু হবে। চক্রতলা গ্রামের শাহাবুদ্দিন বলেছেন, নদী পানি না থাকায় এ অঞ্চলের ১ হাজার একর জমি অনাবাদি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভরণপাড়া গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, নদী পানি না থাকায় আমরা ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে ইরি, বোরো আবাদ করছি। তাতে আমাদের তিনগুণ-চারগুণ খরচ হচ্ছে। ধনেশ্বর গ্রামের কৃষক মো. হোসেন বলেন, কৃষিজমি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের উচিত নদীটি খনন করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা।
কৃষি ও পরিবেশবিদ শামসুদ্দিন বলেন, আমরা নদের পাড়ের মানুষ ছোটবেলায় এ নদে জাল দিয়ে মাছ ধরিছি, বাপ-চাচা কৃষিপণ্য চাষ করেছেন, নদে পালের নৌকা ছিল, ছিল কৃষকের মুখে হাসি। এখন আর নদে পানি না থাকায় কৃষকের মুখে এখন আর হাসি নেই।