শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিলুপ্তপ্রায় কাঁসা পিতল শিল্প

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

বিলুপ্তপ্রায় কাঁসা পিতল শিল্প

শরীয়তপুরের একটি কারখানায় তৈরি হচ্ছে কাঁসা ও পিতলের পণ্য -বাংলাদেশ প্রতিদিন

এক সময় শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং, বিলাশখান, বাঘিয়া, দাসার্তা গ্রামে ঢুকলে মানুষ হাত দিয়ে দুই কান বন্ধ করে হাঁটতো। কাঁসা ও পিতল কারিগরদের অবিরাম হাতুরির বাড়িতে টুং-টাং শব্দ কানে তালা লাগাতো অনেকে। এটা এখন শুধুই স্মৃতি। ঐতিহ্যের কাঁসা-পিতল শিল্পীও যেমন আগের মতো নেই, তেমনি বিলুপ্তপ্রায় এ শিল্পও। এককালে উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবারে ২ হাজারের বেশি কর্মী কাঁসা ও পিতল শিল্পে জরিত ছিলেন। কালের বিবর্তে এখন ৫০৬টি পরিবারে ১৫-২০ জন এ শিল্প ধরে রেখেছে। শরীয়তপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেন এমন ব্যক্তি ও শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে কাঁসা-পিতল শিল্পের জড়িত কংসবণিক সম্প্রদায় প্রথমে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে পশ্চিম বঙ্গের হুগলির চন্দন নগর বসতি গড়ে। সেখান থেকে একটা অংশ বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের লৌহজং গ্রামে আসে। পদ্মার ভাঙনের ফলে লৌহজং থেকে কংসবণিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ অংশ শরীয়তপুরের দাসার্তা, বাঘিয়া, পালং, বিলাশখান গ্রামে এসে বসতি গড়ে কারখানা স্থাপন করেন। শরীয়তপুর সদরে তথা পালং ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলাও তারা বসতি গড়লেও সংখ্যায় খুব কম। বাঘিয়া, দাসার্তা, বিলাশখান ও পালং গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে কারখানা গড়ে উঠলেও পালং বাজার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ২০-৩০ বছর আগেও এ শিল্পের ৪ শতাধিক পরিবার জড়িত ছিল। এখানে কাঁসা-পিতল শিল্পের ২ থেকে ৩ শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে জেলায় সাত-আটটি পরিবার শিল্পটি ধরে রেখেছে। শুধু পালং বাজারেই ৩০-৪০টি কাঁসা-পিতল সামগ্রী বিক্রির দোকান থাকলেও এখন আছে মাত্র দুটি। এক সময়ে মানুষ আচার-অনুষ্ঠানে উপহার দিতে বা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে প্রধান ও প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল কাঁসা-পিতলসামগ্রী। বর্তমানে প্লাস্টিক মেলামাইন জিনিসের ছড়াছড়ি ও সহজলভ্যতার কারণে মানুষ কাঁসা-পিতল উপহার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী যেমন বিন্দাবনী, বালতি, কলস, প্লেট, পানদান ছাড়া আর কোনো সামগ্রীর চাহিদা নেই। বিসিক শিল্প নগরী শরীয়তপুরের এক কর্মকর্তা জানান, ২০ বছর আগে যখন এখানে একবার এসেছিলাম তখন টুংটাং শব্দে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কুটির শিল্প হিসেবে (যেহেতু হাতের কাজ) উদ্যোক্তারা এলে ঋণদান, পরামর্শসহ তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কেউই আমাদের কাছে আসেন না।

সর্বশেষ খবর