বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনার চর এখন হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদনের নতুন মাঠ। বন্যার পর পলি আর জেগে ওঠা ধু-ধু বালুচরই নদীভাঙন কৃষকদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যমুনার পতিত চরে বিভিন্ন ফসল আবাদের পর ফলন স্থানীয় হাটে বিক্রি করে নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন নদী ভাঙনকবলিতরা। যমুনা নদীর চরে জেগে ওঠা চরে ফসলের পাশাপাশি কেউ আবার গরু-ছাগলের খামার গড়েও আয় করছেন। এক বন্যা থেকে পরের বন্যার মেয়াদের মধ্যে স্থানীয় চাষিরা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ফসল কেনাবেচা করে থাকেন। জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে বগুড়া অঞ্চলের যমুনা নদীতে তেমন পানি নেই। প্রমত্তা যমুনা নদী এখন নাব্য হারিয়ে বিভিন্ন রুটে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে যমুনার বুকে এখন ধুধু বালুচর। মাইলের পর মাইল হেঁটে চরে বসবাসরত মানুষকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যমুনা চরে শিক্ষার আলো, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক সেবাসহ প্রায় সব ধরনের নাগরিক সেবা বঞ্চিত। পলিমাটি ও চরের বালুর মাঝেই চাষাবাদ এবং গরু-ছাগল পালন এদের প্রধান পেশা। চরে মরিচ, আলু, বাদাম, মিষ্টি লাউ, শসা, গম, ভুট্টাসহ প্রায় সব রকমের ফসলের চাষ হয়। চাষের পর ফলন তুলে স্থানীয় হাটে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। গত ২০ বছর ধরেই বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার ভয়াভহতা থাকে। উজান থেকে নেমে আসা সামান্য ঢলের পানিতেই নদী পরিপূর্ণ হয়ে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা ও নদীভাঙনের পানি নেমে যাওয়ার পরই নতুন নতুন চর জেগে ওঠে। জেগে ওঠা এ চরই এখন নদী ভাঙনকবলিতদের নতুন করে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বন্যায় পলি পড়া ধুধু চরে সবজি, ধান, পাট, মরিচ চাষ করছে চাষিরা। চাষের পর ফসল বিক্রি করে লাভের আয় দিয়ে বেঁচে আছে নদীভাঙনের শিকার কয়েক হাজার পরিবার। জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার শংকরপুর, ধারাবর্ষা, কেষ্টিয়ারচর, আওলাকান্দি, বেণীপুর, কাজলা, বাওইটোনা, কুড়িপাড়া, পাকেরদহ, টেংরাকুড়া, পাকুড়িয়া, চর ঘাগুয়া, জামথল, বেড়াপাঁচবাড়ীয়া, ফাজিলপুর, চালুয়াবাড়ী, শিমুলতাইড়, ধারাবরিষা, বিরামের পাঁচগাছি, হাটবাড়ী, দলিকা, মানিকদাইড়, কর্ণিবাড়ী, শনপচা, নান্দিনাচর, ডাকাতমারা, শালুখা, চরবাটিয়া, ক্ষেপিরপাড়াসহ ৬৯টি চরে ফসল ভালো উৎপন্ন হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর উপজেলায় মরিচ চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৪ হেক্টর জমিতে। এ পরিমাণ জমি থেকে মরিচ উৎপাদন হবে ৯ হাজার ২১৪ টন। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩৮৫ কোটি টাকার বেশি। যমুনার পতিত জমিতে প্রায় ৬ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ফলন হবে ৬৪ হাজার ১০০ টন। যার বাজারমূল্য ১৬০ কোটি টাকার বেশি। বন্যার পর পরই ৭ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৩৩০ টন পাট উৎপন্ন হয়। যার মূল্য ১২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৫০ টন কাউন, ৭৫ হেক্টর জমিতে ৯৫ টন চিনা (খেরাছি), ৮৮০ হেক্টর জমিতে ৭৬৫ টন চিনাবাদাম, ১২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার ৮৫০ টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। এ ছাড়া চরে মিষ্টি আলু, খেসারি, তিল, তিসি, কালোজিরা, স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান ও বোরোধান চাষ হয়ে থাকে। এসব মিলিয়ে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। সবগুলো ফসল মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার প্রতি বছর লেনদেন হয়ে থাকে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে রয়েছে গরু-ছাগলসহ নানা ধরনের গৃহপালিত পশু-পাখি। এসব গৃহপালিত পশুপাখি বিক্রি করে তারা মোটা অঙ্কের টাকা জমার পাশাপাশি নিজেদের সংসার পরিচালনা করছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ইন্দুরমারা চরের রিপন মিয়া জানান, বন্যার মধ্যে খুব কষ্টে থাকলেও বন্যা পরবর্তী নানা ধরনের ফসলে আমাদের বাড়িভরে যায়। এসব ফসল বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছি। চরের জমিতে তেমন খাটতে হয় না।
শিরোনাম
- সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
- ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো যাবে না : মৎস্য উপদেষ্টা
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারে শুরু জুলাইয়ে
- ‘ভারতের অন্যায় আবদারের কাছে আমরা মাথানত করবো না’
- নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে : নায়াব ইউসুফ
- চাঁদা আদায় বন্ধের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
- রায় মেনে ভারতকে সিন্ধু পানি চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাল পাকিস্তান
- ভোটকেন্দ্র নীতিমালার গেজেট প্রকাশ, ডিসি-এসপির কমিটি ও ইভিএম বাদ
- গাজা যুদ্ধে সেনা হতাহতের সংখ্যা জানাল ইসরায়েল
- সাজা মওকুফ হওয়ায় মুক্তি পেলেন যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ১৩ আসামি
- মঙ্গলবার থেকে আমদানি-রফতানির সব সনদ অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক
- ‘জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে দ্রুত সময়ে নির্বাচনের ঘোষণা সরকার’
- এবার নিউইয়র্কের তহবিল বন্ধের হুমকি দিলেন ট্রাম্প
- স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মমতা’ প্রকল্প বন্ধের খবরে দুশ্চিন্তায় চরাঞ্চলের প্রসূতিরা
- ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করেছে সরকার
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
- বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা
- আমেরিকায় যেভাবে ভয়ানক আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘লাফিং গ্যাস’
- দল নিবন্ধন : আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে ইসির ৭ কর্মকর্তা
- বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মতবিনিময় সভা
যমুনার চরে ফসলের সমাহার
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর