গরম বাড়ায় লবণ চাষে সুবাতাস বইছে। আগে সামুদ্রিক লোনা পানি মাঠে এনে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে লবণ উৎপাদন হতে এক সপ্তাহ লাগত, এখন চাষিরা তা পাচ্ছে মাত্র তিন দিনে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, বর্তমানে কক্সবাজারের ৬০ হাজার একরের বেশি মাঠে দৈনিক ৩৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদার বিপরীতে গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সন্তোষ নন প্রান্তিক চাষিরা। লবণ শিল্প ঘিরে সৃষ্ট দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অনেকটা অসহায় তারা। চাষিদের দাবি, জমি থেকে শুরু করে মাঠ তৈরি, পলিথিন কেনা, লবণ বিক্রি সব কিছুতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে তারা জিম্মি। ইতোমধ্যে দালাল চক্রের ৬০০ জনকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুও করেছে বিসিক। কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের লবণ মাঠে কথা হয় প্রান্তিক চাষিদের সঙ্গে। তাদের একজন আবদুল গফুর। তিনি ৪০ বছর ধরে মাঠ বর্গা নিয়ে লবণ উৎপাদনে জড়িত। গফুর বলেন, এক বছর চুক্তিতে জমি বর্গা নিয়ে লবণ উৎপাদন করতে হয়। প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে জমি বর্গা নেওয়ার সুযোগ তারা পান না। একটি চক্র মালিকদের থেকে গোপনে জমি বর্গা নিয়ে নেন। পরে দালালের কাছ থেকে একরপ্রতি ৩৫-৫০ হাজার টাকায় বর্গা নিতে হয়। প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া সম্ভব হলে প্রতি একর ২৫-৩০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত। জমি বর্গা নেওয়ার পর মাঠের জন্য পলিথিন কিনতেও হয় দালালদের কাছ থেকে। পলিথিনের কেজি বাজারে ১২০ টাকা, কিন্তু দালালদের কাছ থেকে কিনতে হয় ১৫০ টাকা দরে। আবদুল মালেক নামে আরেক চাষি জানান, মাঠে উৎপাদিত লবণও সরাসরি মিল মালিকদের বিক্রির সুযোগ নেই। বিক্রি করতে হয় দালালদের মাধ্যমে। মিল মালিকরা লবণ মণপ্রতি ৫০০ টাকায় কেনেন। চাষিরা পান ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি মণে ১০০ টাকা নিয়ে যান দালালরা। শুধু চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন নয়, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁওসহ সব লবণ মাঠ এভাবে নিয়ন্ত্রণ করে দালাল সিন্ডিকেট। কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, প্রান্তিক লবণ চাষিদের ঘিরে একটি চক্র বারবার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। চাষিরা সরাসরি জমি বর্গা নেওয়া, পলিথিন কেনা ও লবণ বিক্রি করতে পারলে আরও বেশি লাভবান হবেন। বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, লবণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দালাল চক্র তৎপর রয়েছে। ৬০০ মধ্যস্বত্বভোগী শনাক্ত করে তালিকা করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।