পদ্মা নদীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অংশে সারা বছর ভাঙন থাকলেও বর্ষা মৌসুমে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। সম্প্রতি পদ্মার ভাঙন তীব্র হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমিসহ সরকারি স্থাপনা ও নদী তীরবর্তী ঘরবাড়ি।
স্থানীয়রা বলছেন, উজানের ঢল আর বর্ষণের কারণে বাড়ছে নদীর পানি। ফলে দিন দিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে পদ্মা। গত এক দশকে সরকারি হিসাবে ভিটেমাটি হারিয়েছে পদ্মাপাড়ের ১ হাজার মানুষ। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমিসহ সরকারি স্থাপনা ও বসতভিটা। জানা যায়, সম্প্রতি শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চরপাকা ঈদগাহ থেকে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ছাব্বিশ রশিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নদীভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন। ইতোমধ্যে চরপাকার তেরশিয়া গ্রামের শতাধিক মানুষ ভাঙনের কবলে ভিটেমাটি হারিয়ে বিশ রশিয়ার নামোচর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ণ কেন্দ্র, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণপুর এমএ উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণপুরের বাতাস মোড় বাজারসহ কয়েক হাজার কৃষকের জমি ও প্রায় ৫ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। অপরদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের নামো জগন্নাথপুরের পন্ডিতপাড়া থেকে একই এলাকার দোভাগী পর্যন্ত ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে কয়েক শ বিঘা ফসলি জমি। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁঁকিতে থাকা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন এবং একটি মসজিদ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, চলতি বছর নদীভাঙনে এসব এলাকার ৪০টি বাড়ির ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে আরও তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সাদ্দাম আলী নামে পদ্মাপাড়ের এক বাসিন্দা জানান, নদীতে পানি বাড়লে এবং কমলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে উজানের ঢল আর বর্ষার কারণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না ভাঙন রোধে। তিনি আরও বলেন, অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ-জিও টিউব ব্যবহার করে নদীভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউব)। তাতে কোনো কাজ হয় না। পদ্মাপাড়ের মানুষের দাবি, ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন জানান, নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পের কাগজপত্র সদাখিল করেছেন। প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি।