বগুড়ার জনপদ আবারও রক্তাক্ত হয়ে উঠছে। পূর্বশত্রুতা, হিংসা, বিদ্বেষ আর অধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাড়ছে খুনোখুনি। টহল পুলিশ না থাকায় শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে চুরি, ছিনতাই। গত এক সপ্তাহে বগুড়া শহরে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অপরাধ কর্মকান্ড বাড়ায় উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, সব অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তির বিধান করা হোক।
জানা যায়, এক সময় বগুড়া সদর থানায় অপরাধীদের তালিকা ঝুলিয়ে মাঝেমধ্যে অভিযান চালাত পুলিশ। আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা বের হয়ে আবার অপরাধ কর্মকান্ডে জড়াত। এই প্রবণতা এখনো রয়েছে বগুড়ায়। জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে চুরি ছিনতাই। শহরের প্রায় প্রতিদিন ঘটছে পকেট কাটার ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিনদুপুরে ঘটছে হত্যাকান্ড।
সোনাতলা উপজেলার দিঘদাইড় ইউনিয়নের সৈয়দ আহমেদ কলেজের বটতলা এলাকায় গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে দুলাল হোসেন নামে একজনকে খুন করা হয়। দুলাল ওই এলাকার সাফাত আলীর ছেলে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এক গৃহবধূর সঙ্গে দুলালের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এর জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১২টায় বগুড়া শহরের জয়পুরপাড়ায় আজিজার রহমানের ছেলে রানা মিয়া রিকশা ভাড়া দেওয়া নিয়ে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে খুন হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী রোজিনা বেগমও। রানা পেশায় লোহা ব্যবসায়ী ছিলেন। বগুড়া শহরের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড ঘটে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় হত্যায় সন্দেহজনক যুবক সালমান হোসেন লেদুকে (৩৯) কয়েকজন পিটুনি দিলে সেও মারা যায়। নিহত মিজান গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলীর ছেলে। অন্যজন একই এলাকার বুলু মিয়ার ছেলে সালমান হোসেন লেদু। ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়া সদর উপজেলার কৈচড় মাদরাসা মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে কিশোর রিয়াদ খুন হন। সে ওই এলাকার তারা মিয়ার ছেলে। লেদু একটি ছাপাখানায় কাজ করত।
১১ সেপ্টেম্বর ধুনট উপজেলায় এলাঙ্গী বাজার এলাকায় মামুন মিয়া (২৫) নামে ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। মামুন উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। আইনশৃঙ্খলার অবনতির মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে সুদের কারবারিরা। বগুড়া শহরে মালগ্রাম ডাবতলা এলাকার শাহিনা বেগম গত বুধবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। শহরের মালগ্রাম এলাকার শহিদুল ইসলাম মিঠুর স্ত্রী আরজুনা বেগম জীনার দাদন ব্যবসার ফাঁদে এলাকার শত শত মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন- দাবি তার।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ কাজ করছে। তদন্তের বিষয়টি চলমান। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন। জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক বগুড়া সভাপতি মাসুদার রহমান বলেন, শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দিনেও খুন ও ছিনতাই হচ্ছে। রাত নামলে বাড়ছে আতঙ্ক। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। সব অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন।