ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়কজুড়েই তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে একেকটা খানাখন্দ ছোট ছোট পুকুরে পরিণত হয়। বিশাল গর্ত যেন একেকটা মৃত্যুর ফাঁদ। সব মিলিয়ে বেহাল সড়কটি। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের। কয়েক দিন ধরে এ সড়ক একেবারেই যেন যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াতের জন্য একসময় প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহার হতো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়ক। এ জেলার পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দাদেরও ঢাকা যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এ সড়ক। ১৯৯৫ সালের দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের নির্মাণকাজ শেষ হলে দ্রুত যাতায়াতে রুটটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর দীর্ঘ সময়েও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পঞ্চবটি থেকে চাষাঢ়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে গেছে। সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা সড়ক দিয়ে যানবাহন ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে। সড়কের দুই পাশের শোল্ডারিং ভেঙে গেছে। কাদামাটিতে গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রায়ই যানবাহনের চাকা আটকা পড়ে। বৃষ্টি হলে তো বলারই অপেক্ষা থাকে না। বড় বড় গর্ত একেকটা পুকুরে পরিণত হয়। প্রায় সময়ই এ সড়কে উল্টে যায় যানবাহন। দুর্ঘটনায় হামেশাই আহত হয় লোকজন। প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায় যানবাহন। মাঝসড়কে বিকল হয়ে যাওয়া যানবাহন ভোগান্তি ও যানজট বৃদ্ধি করে বহুগুণ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটিসংলগ্ন শাসনগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় আছে সহস্রাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যাতে অন্তত ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করে। ফতুল্লার মুন্সিখোলা রড-সিমেন্টের পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র, আলীগঞ্জ ও দাপায় পাথর ও বালু ব্যবসা, পঞ্চবটি, নরসিংপুর, বক্তাবলীতে শতাধিক ইটভাটা, বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক রি-রোলিং মিল, পঞ্চবটিতে মেঘনা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম তেলের ডিপো রয়েছে। এসব শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, ট্যাংকলরিসহ কয়েক হাজার যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচল করছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়ক দিয়ে। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে গড়ে ওঠা শাহ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ক্রাউন সিমেন্টসহ বেশ কিছু কারখানার কয়েক শ কাভার্ড ভ্যানও প্রতিনিয়ত সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়া গণপরিবহন তো আছেই। সবার কাছেই রাস্তাটি সীমাহীন দুর্ভোগের আরেক নাম।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর বলেন, ‘নানা কারণে সড়কটিকে মৃতপ্রায় বলা চলে। সড়কটিতে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়েছি। পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন কারখানার মালিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ জন লোক নেওয়া হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য। তাদের আমরা যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করব; যাতে যানজট কিছুটা দূর করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একাধিকবার নারায়ণগঞ্জ সওজকে বলেছিলাম সাময়িকভাবে হলেও সড়কটি সংস্কার করে দিন। তারা বলেন এ সড়ক তাদের নিয়ন্ত্রণে নয়।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ‘এ সড়কটি আসলে আমাদের অধীনে নয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র একটি চিঠি দিয়েছিলেন আমাদের অধীনে দেওয়ার জন্য। পরে আমাদের আর দেওয়া হয়নি। আমাদের অধীনে থাকলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সংস্কার করে দেওয়া যেত।’