কুমিল্লায় শত বছর পর বেজে উঠল হারিয়ে যাওয়া কলের গান (গ্রামোফোন)। শহরতলীর শাসনগাছা এলাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ে কলের গানের সন্ধান মেলে। তেল, মবিল, বিদ্যুৎ ছাড়া চলে কলের গান। এটি দেখতে অনেকে ভিড় করছেন। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ১৯ শতকের প্রথম দিকে কুমিল্লা ছিল সুরের শহর। এ শহর উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, আয়াত আলী খাঁ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, শচীন দেব বর্মণের শহর। এ শহরে এক সময় প্রায় প্রতিটি বনেদী পরিবারে গ্রামোফোন ছিল। কৃষি অফিসে পাওয়া গ্রামোফোনটিও সেই সংস্কৃতির অংশ হতে পারে। এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। সরেজমিন জানা যায়, অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের স্টোর রুমে এ কলের গান পাওয়া যায়। সেটি কয়েক দিন আগে কয়েকজন স্টাফের নজরে আসে।
তারা কলের গানটি বের করে বাজানোর চেষ্টা করেন। পরিত্যক্ত যন্ত্রটি বেজে উঠলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ঘুনে ধরা বাক্সের ভিতরে যাওয়া যন্ত্রটি এখনো নতুনের মতো। ধুলা মুছে একজন স্টাফ রেকর্ড লাগিয়ে হাতল ঘুরিয়ে যন্ত্রে দম দেন। একটু পরে বেজে উঠে আব্বাস উদ্দিনের গাওয়া-আমরা দিন কি এমনি যাবে বইয়াসহ নানা গান।
১৯৮০ সালে এ অফিসে যোগ দেন সাবেক স্টেনোগ্রাফার আবদুল হক। তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান। তিনি বলেন, এ অফিসটি ব্রিটিশ আমলে করা। সে সময় এটির অধীনে ছিল চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকা। অফিসটি ছিল চট্টগ্রামে আঞ্চলিক অফিস। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ক্লাব ঘর করা হতো। সেখানে গান ও কৃষি বার্তা প্রচারে কলের গান বাজানো হতো। সেখান থেকে এটি আসতে পারে।
ঐতিহ্য গবেষক নাজমুল আবেদীন বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে কুমিল্লার বিভিন্ন বাসায় কলের গান বাজতো। একজনের বাড়িরটা শুনতে ১০ বাড়ির মানুষ আসতেন। ৭০ দশকের পর এটি হারিয়ে গেছে। কৃষি অফিসে পাওয়া কলের গানটি সংস্কার করা উচিত। নতুন প্রজন্ম ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।