নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিনদিন অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে খুন, ছিনতাইসহ অপরাধপ্রবণতা। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোনো না কোনো এলাকায় ঘটছে হত্যাকান্ড। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জেলায় হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ৮৬ জন। পাশাপাশি বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, মাদক ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একই সময়ে চুরি হয়েছে ৯৭টি, ছিনতাই ৩৪টি, ডাকাতি ১৯টি। এ ছাড়া ৭৬১টি মাদক এবং নারী নির্যাতন আইনে ২০৩টি মামলা হয়েছে। সবশেষ ৭ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে একাধিক মামলার আসামি কিশোর গ্যাংপ্রধান ইভনকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৮ জানুয়ারি আড়াইহাজারের রাধানগরে জমি নিয়ে বিরোধে খুন হন মিলন মিয়া (৫০) নামে এক ট্রলারচালক। ৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার পুরান বাজার এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মারা যান দুজন।
৩১ মার্চ ফতুল্লায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর রোডের কাশিপুরে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে পাভেল (৩৯) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১১ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া থেকে দুই নারী ও এক শিশুর খি ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৪ জুন ফতুল্লার উত্তর নরসিংহপুরে মাদক বিক্রির পাওনা টাকা না পেয়ে স্বপন মোল্লা (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৪ জুলাই আড়াইহাজারের পূর্বপাড়ায় বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ছেলের বিরুদ্ধে। মৃতের নাম মো. মাহবুব (৪২)। ২৭ আগস্ট বন্দরে কুড়িপাড়া স্কুলমাঠসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক যুবকের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত হাবিবুর (২৮) সোনারগাঁয়ের চান মিয়ার ছেলে। রাজনৈতিক সংঘাতেও অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ মার্চ রূপগঞ্জের চনপাড়ায় যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল সংঘর্ষে হাসিব (২৮) নামে একজন নিহত হয়েছে। ১০ জুন রূপগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে এসে ছাত্রদল নেতার গুলিতে প্রাণ হারান মামুন হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী। একই মাসে বন্দর উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে আবদুল কুদ্দুস (৫৫) ও মেহেদী হাসান (৪২) নামে দুজনের মৃত্যু হয়। সবশেষ জুলাইয়ে আড়াইহাজারে বিএনপির অফিস ভাড়া চাওয়া কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫৭) নামে এক দোকান মালিক ও মৎস্যজীবী দলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে; ফলে অপরাধ কিছুটা বেড়েছে। আমরা কঠোর নজরদারিতে রেখেছি পুরো জেলা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা বদ্ধপরিকর।’ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জনবহুল এলাকা। এখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ বসবাস করে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের কিছুটা বেগ পোহাতে হয়। যে কোনো ঘটনা ঘটলেই অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিরলস কাজ করছে।’