ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে সম্পূর্ন বিলীন হয়ে গেছে খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে। সকালের শীত ও দুপুরের রোদে শিশুদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ফলে পড়ালেখা ব্যাহত হওয়াসহ নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে চায় না বলে জানা গেছে। আবার অনেকে স্কুল পরিবর্তন করছে। দিনের পর দিন এভাবে চললেও দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থ বরাদ্দ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে দায় সারার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন পত্র জমা দিলেও কার্যকরি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় খেদাইমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মানও অনেক ভালো। নদের গর্ভে বিলীন হওয়ার পর বর্তমানে বাগুয়ারচর নামক স্থানে সরিয়ে নেয়া এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাড়ে ৩শ’ ও শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন। স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাঁশ ও টিন দিয়ে একটি ছাপরা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাপরা ঘরেও ছাত্র-ছাত্রীদের জায়গা হচ্ছে না।
২০১৩ সালে সারাদেশের রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি সরকারিকরণ হলে খেদাইমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ও সরকারিকরণ করা হয়। এরপর বিদ্যালয়টি ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে বিলীন হয়ে যায়। ফলে খোলা আকাশের নীচেই পাঠদান চলছে।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র মিঠুন, লিটন, সাজেদুল, বিউটি,স্বপ্না, ৪র্থ শ্রেণীর ঝরনা, ফারজানা, ২য় শ্রেণীর রাশেদুল ও ১ম শ্রেণীর নিশি খাতুনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রচন্ড রোদে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে শিক্ষা অধিদপ্তরের আর্থিক সহযোগীতায় প্রকৌশলী অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন এবং তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। এ বছরের ১৯শে এপ্রিল বিদ্যালয়টি সম্পূর্ন নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এসময় উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়াম্যান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় এমপি রুহুল আমিন পরিদর্শন করে বিদ্যালয়টি বাগুয়ারচর নামক স্থানে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু নতুন ভবন ও শ্রেণীকক্ষের সংকটে দুই শিপটে ছাপরা ঘরে পাঠদান করাতে হচ্ছে। নতুন বছরের নতুন বই নিয়ে উৎসবের আমেজে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও শ্রেণীর কক্ষে পড়ানোর কোন পরিবেশ না থাকায় খোল আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি সম্পূর্ন নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেলে নতুন ভবন নির্মাণ করতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। কিন্তু আশানুরুপ কোন সাড়া পাচ্ছিনা।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভবন না থাকায় ঠিকমত ক্লাসও চালাতে পারছেন না শিক্ষকরা। বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/৩০ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল