আজ ১৪ মে, মানবজাতির ইতিহাসের এক কলঙ্কিত দিন। এই দিনে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে বিষফোড়ার মতো আত্মপ্রকাশ করেছিল ইসরায়েল নামের এক দেশ। ইহুদিরা যে দেশটিকে তাদের জাতি ও ধর্মরাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। দুনিয়ার যে প্রান্তেই তারা বসবাস করুক না কেন, ইসরায়েলের জন্য অবদান রাখাকে তারা ধর্মীয় কর্তব্য বলে ভাবে। রাষ্ট্র হিসেবে ক্ষুদ্র হলেও সারা দুনিয়ার ইহুদিদের মদতে প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে এ দেশটি সমীহ পাওয়ার যোগ্য। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইসরায়েল যে কোনো ইউরোপীয় রাষ্ট্রকেও চ্যালেঞ্জ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
মানব সভ্যতার বিকাশে ইহুদিদের অবদান অনন্য। আল্লাহ এক ও সর্বশক্তিমান- এ তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে ইহুদি ধর্ম। মানবজাতির জন্য আইনকানুন প্রণয়নেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত বা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে অবিশ্বস্ত জাতি হিসেবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বারবার তারা মহান আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন করে বিপথগামী হয়েছে। এজন্য কঠোর শাস্তিও দেওয়া হয়েছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে। ইহুদিদের সুপথে আনতে তাদের মধ্যে একের পর এক নবীর আগমন ঘটেছে। আল্লাহ ইহুদিদের সুপথে পরিচালিত করতে তাদের কাছে পাঠান সর্বশেষ এক পবিত্র পুরুষকে। নাম তাঁর হজরত ঈসা (আ.) বা যিশুখ্রিস্ট। ইহুদি সমাজপতিরা যিশুখ্রিস্টের আবির্ভাবকে নিজেদের কায়েমী স্বার্থের জন্য হুমকি বলে ভাবে। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তারা। যিশুর বিরুদ্ধে ধর্ম ও রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয় রোমান গভর্নর পিলাতের কাছে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, ইহুদিদের অন্যায় আবদারে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয় ওই মহাপুরুষকে।
ইহুদিরা যিশুখ্রিস্টের মানব মুক্তির মতবাদকে প্রতিহত করতে যে অন্যায় পথ বেছে নেয়, তা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যিশুর জন্মস্থান ফিলিস্তিন শুধু নয়, চারদিকে তাঁর ধর্মমতের বিস্তৃতি ঘটে দ্রুতবেগে। ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট টাইটাস জেরুজালেম ধ্বংস করেন। ইহুদিদের একাংশকে হত্যা করেন নির্মমভাবে। আরেক অংশকে দাস হিসেবে নিয়ে যান নিজের দেশে। যেসব ইহুদি পালিয়ে প্রাণে বাঁচে, তারাও টিকে থাকতে পারেনি পবিত্র জেরুজালেম তথা ফিলিস্তিনে। তারা পালিয়ে যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। সেসব দেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের পর ইহুদিদের দেখা হতো ঘৃণার চোখে। যিশুখ্রিস্টের হত্যাকারী হিসেবে। ১৯০০ বছর ধরে ইহুদিরা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত ধর্মীয় গোষ্ঠী। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলার যে ইহুদি হত্যাযজ্ঞ চালায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার পেছনে ছিল ইহুদিদের প্রতি খ্রিস্টানদের সহজাত ঘৃণার প্রকাশ।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের চার দশকেরও বেশি আগে ১৮৯৬ সালে থিউডোর হারজল নামের একজন ইহুদি সাংবাদিক ও আইনবিদ ইহুদিবাদের তত্ত্ব প্রচার শুরু করেন। বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে তিনি প্রচার করেন ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া তাদের মুক্তি নেই। সে রাষ্ট্রের জন্য তিনি আফ্রিকার উগান্ডাকে পছন্দ করেন। কিন্তু উগান্ডাবাসীর তীব্র আপত্তির মুখে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপর সম্ভাব্য ইহুদি রাষ্ট্রের স্থান হিসেবে পছন্দ করা হয় ফিলিস্তিনকে। যে ভূখণ্ডটি ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে কেনান নামে পরিচিত। ইহুদিদের বিশ্বাস, এটি তাদের জন্য ঈশ্বরপ্রদত্ত পবিত্র ভূমি।
শত শত বছর ধরে ফিলিস্তিন ছিল তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে। অটোমান সাম্রাজ্য ছিল প্রথম মহাযুদ্ধের আগে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশের বিরাট অংশজুড়ে। সব আরব দেশ ছিল তাদের অধীনে। ইউরোপের খ্রিস্টান দেশগুলোতে ইহুদিরা নির্যাতিত হলেও অটোমান সাম্রাজ্যে তারা নির্বিঘ্নে বসবাস করার সুযোগ পেত। বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেস বিভিন্ন দেশের ইহুদিদের ফিলিস্তিনে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। ফিলিস্তিনিরাও তাদের দেশে ইহুদিদের আগমনকে বাঁকা চোখে দেখেনি। আগে থেকেই ফিলিস্তিনের ৪ শতাংশ অধিবাসী ছিল ইহুদি। খ্রিস্টান শাসনামলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে নির্যাতনের সম্মুখীন হলেও মুসলিম শাসনাধীনে ৫০০ বছর ধরে শান্তিপূর্ণ জীবনই কাটিয়েছে তারা।
প্রথম মহাযুদ্ধে তুরস্ক যোগ দেয় জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি ও হাঙ্গেরির সমন্বয়ে গঠিত যুদ্ধ জোটে। এর বিপরীতে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোট। প্রথম মহাযুদ্ধে তুরস্ক চরমভাবে পরাজিত হয়। ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনীর কাছে চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ। জেরুজালেম বা ফিলিস্তিন ব্রিটিশদের দখলে আসে।
প্রথম মহাযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর জয়ের পেছনে ইহুদিদের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তার ভূমিকা ছিল ব্যাপক। ১৯১৭ সালে বিশিষ্ট ইহুদি ব্যাংক ব্যবসায়ী লাইনেল ওয়াল্টার রথ চাইল্ডের কাছে চিঠি লেখেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্ল বেলফোর। তাতে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন তুরস্কের অটোমান সম্রাটের কাছ থেকে ফিলিস্তিন দখল করতে পারলে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। তার আগেই ব্রিটিশরা ফরাসিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চুক্তিবদ্ধ হয়। তাতে বলা হয়, ফিলিস্তিন থাকবে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে।
প্রথম মহাযুদ্ধের পর থেকে ফিলিস্তিন ব্রিটিশদের অধীনে থাকলেও তারা ইহুদিদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে তাড়াহুড়া করেনি। ১৯৩৭ সালে রড পিলের নেতৃত্বাধীন কমিশন ফিলিস্তিন ভাগ করে ইহুদি ও আরবদের জন্য দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। পরে উড হিড কমিশন রড পিল কমিশনের রিপোর্টে সংশোধন এনে যে প্রস্তাব দেয়, তা ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করে। তবে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সংঘাত এড়াতে ইউরোপ থেকে বছরে ৭৫ হাজারের বেশি ইহুদি ফিলিস্তিনে বসতি গাড়তে পারবে না। তবে ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনে বিপুলসংখ্যক ইহুদির আগমন ঘটায় তা ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা স্বদেশে পরবাসী হয়ে পড়ার শঙ্কায় ভুগতে থাকে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও বিরোধিতা করে ফিলিস্তিনিরা।
১৯৩৯ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। এ মহাযুদ্ধের একপক্ষে ছিল জার্মান, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও জাপানের নেতৃত্বে যুদ্ধ জোট। এর বিপরীতে ছিল ইংল্যান্ড ফ্রান্স রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোট। মহাযুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপে জার্মানির আগ্রাসনে একের পর এক দেশের পতন ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে চলে ইহুদি হত্যা। জার্মানরা মনে করত, প্রথম মহাযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের জন্য ইহুদিরাই দায়ী। জার্মান বাহিনীর হাতে ৬০ লাখ ইহুদি প্রাণ হারায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মান-জাপান যুদ্ধজোট পরাজিত হয় নিজেদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে। জাপান আমেরিকান স্থাপনায় হামলা চালিয়ে প্রকারান্তরে তাদের যুদ্ধে নামতে বাধ্য করে। জাপান পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র জাপানিদের যুদ্ধস্পৃহা স্তব্ধ করে দেয়। তার আগে জার্মান নেতা হিটলার রাশিয়ায় সামরিক অভিযান চালিয়ে নিজেদের কবর রচনার পথ বেছে নেয়। যুদ্ধে নয়, রাশিয়ার প্রচণ্ড শীতের কাছে পরাজিত হয় জার্মান বাহিনী। হিটলারের জার্মানির পাশাপাশি জাপানও আণবিক বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে গণহত্যার কারণে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের সহানুভূতি অর্জন করে ইহুদিরা। এ সহানুভূতি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তাগিদ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ৫৫ ভাগ ও আরবদের জন্য ৪৩ ভাগ স্থানে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নেয়। প্রস্তাবে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র নগরী হিসেবে পরিচিত জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে রাখার কথা বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ৩৩টি দেশ জাতিসংঘ প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। ভারত, বিভিন্ন আরব দেশসহ ১৩টি দেশ এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। সবচেয়ে লজ্জাজনক ছিল ধর্মের ভিত্তিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কারণ নীতিগতভাবেই তারা ধর্মীয় রাষ্ট্রতত্ত্বের বিরোধী। এটি অক্টোবর বিপ্লবেরও পরিপন্থি। যদিও তারা তাদের ভুল থেকে সরে এসে অচিরেই ফিলিস্তিনিদের বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
জাতিসংঘে প্রস্তাব পাসের ছয় মাস পর ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শেষ হওয়ার মাত্র আট ঘণ্টা আগে ইহুদিবাদী নেতা ডেভিড বেন গুরিয়েন ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতিসংঘের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনে ইহুদি ও আদিবাসী ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও তারা এজন্য বিশ্ব সংস্থা কবে উদ্যোগ নেবে, সে অপেক্ষায় থাকেনি। স্বভাবতই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বিভিন্ন আরব দেশ। ইসরায়েলের স্বাধীনতার পরদিনই তারা যুদ্ধ ঘোষণা করে ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধে ইসরায়েল বাহিনীকে ঘেরাও করেও আরব দেশগুলো সে জয় ভোগ করতে পারেনি। জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তারা গ্রহণ করে ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে। নির্বোধের মতো তারা আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। এদিকে ইসরায়েল ইউরোপ থেকে উন্নত অস্ত্র এনে পাল্টা হামলা চালায়। ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের বরাদ্দ এলাকার বড় অংশ তাদের দখলে চলে যায়। ১৯৬৭ সালে মিসর, সিরিয়া ও জর্ডান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে ছয় দিনেই পরাজিত হয়। সিরিয়ার গোলান মালভূমি, মিসরের সিনাই ও গাজা এবং জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ইহুদি রাষ্ট্রের দখলে চলে যায়। ১৯৭৩ সালে মিসর ও সিরিয়া ইয়ম কিপুর নামের যুদ্ধে রাজতন্ত্রী আরব দেশগুলোর বিশ্বাসঘাতকতায় হেরে যায়। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরবদের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সর্বনাশই শুধু নিশ্চিত হয়েছে। ইসরায়েল এ যাবৎ যেটুকু পিছু হটেছে সে কৃতিত্ব ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থাসহ বিভিন্ন লড়াকু সংগঠনের। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি গণ অভ্যুত্থানে একপর্যায়ে ইসরায়েল শান্তিপূর্ণ সমাধানে রাজি হয়।
১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় অসলো শান্তি চুক্তি। নরওয়ের সমঝোতায় প্রতিষ্ঠিত এ শান্তি চুক্তিতে ইসরায়েলের পাশাপাশি সশাসিত ফিলিস্তিন প্রশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐকমত্য। ১৯৯৪ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিলিস্তিনি প্রশাসন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পথে এটিকে একটি অগ্রযাত্রা বলে ভাবা হতো। কিন্তু শান্তির এই প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে উঠে পড়ে লাগে শান্তির শত্রুরা। ইহুদি উগ্রবাদীরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনকে হত্যা করে ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর। একই সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনি চরমপন্থিদের উসকে দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনিরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে শান্তি চুক্তিকে কেন্দ্র করে। আরাফাতের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় উগ্র মতের সংগঠন হামাসের কর্তৃত্ব। গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলার জবাবে কয়েক গুণ পাল্টা হামলা চালাবার অজুহাত পায় তেল আবিবের ইহুদিবাদী শাসকরা। গাজায় দুই বছর ধরে যে ফিলিস্তিনি গণহত্যা চলছে, তাতে ৫৫ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। আহতের সংখ্যা কয়েক লাখ। সাজানো গোছানো গাজা উপত্যকা এখন এক বিধ্বস্ত জনপদ।
ফিলিস্তিনিরা এ বছর তাদের পিতৃভূমি অপদখলের ৭৭তম বার্ষিকী পালন করছে। তারা এখন জাতিগত নিধনের শিকার। শক্তির বিচারে ইসরায়েল নিঃসন্দেহে শক্তিশালী। শুধু ফিলিস্তিন নয়, গোটা আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারাই যে এগিয়ে থাকবে, তা এক প্রমাণিত সত্যি। এই দম্ভেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের দমনে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। আরব দেশগুলো তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। মুখে লোকদেখানো প্রতিবাদ করলেও, নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গোপনে গাঁটছড়া বাঁধছে তেল আবিবের শাসকদের সঙ্গে।
সন্দেহ নেই ফিলিস্তিনিরা এখন কোণঠাসা অবস্থায়। তবে তাতে ইসরায়েলের উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে তাদের সমঝোতায় উপনীত হতে হবে। বুঝতে হবে শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকলেও এ সুদিন দীর্ঘস্থায়ী না-ও থাকতে পারে। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও সবারই জানা ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কিন্তু স্মরণ থাকা উচিত ইরানও পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে এগিয়ে গেছে। তুরস্ক পারমাণবিক অস্ত্র শুধু নয়, সমর ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে গত দুই দশকে। সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান চমক দেখিয়েছে তুর্কি সমরাস্ত্র ব্যবহার করে। ইসরায়েলি মানবতাবাদী পারমাণবিক বিজ্ঞানী মরডেকাই ভাননু ১৯৮৬ সালে ফাঁস করেন তেল আবিবের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার তথ্য। তিনি যুক্তরাজ্যে পালিয়ে গেলেও শাস্তি ঠেকাতে পারেননি। ইসরায়েল তার গোঁয়ার্তুমি অব্যাহত রাখলে হয়তো মধ্যপ্রাচ্য থেকেই শুরু হবে পারমাণবিক যুদ্ধ। মানব সমাজের জন্য ডেকে আনবে বিপর্যয়। সে পরিণতি না চাইলে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সমাজকে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল :[email protected]