'পঞ্চাশ বছর বয়সে প্রায় সত্তরবার বাড়ী ভাঙছি। ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ফসলি জমিজমা বিলীন হয়ে যাওয়া রাস্তার ফকির হইয়্যা গেছি। এহোন সরকারে কাছে একটাই দাবি আমাদের যেন স্থায়ী একটা ব্যবস্থা কইর্যা দেন।' কথাগুলো বলছিলেন নদী ভাঙ্গন কবলিত সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের চর বাহুকা টুটুল মোড় এলাকার আছা আলী।
তার মতো একই গ্রামের খয়ের ডাক্তার বলেন, 'চোখের সামনে আমার সাতবিঘা ফসলি জমি বিলীন হইয়া গেছো। যা দিয়ে আমার সংসার চলত। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় জীবনযাপন করছি।' আরেক বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, 'দশ বিঘা ইরি-বোরো প্রজেক্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন রাস্তার ধারে খুপড়ি দোকান দিয়া সংসার চালাইতেছি।' এমন অবস্থা ওই এলাকার শত শত পরিবারের। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, যমুনা নদীতে পানি কম থাকলেও সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউপির চর বাহুকা ও কাজিপুরের শুভগাছা ইউনিয়নের ঘাটি শুভগাছা এলাকার প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। পূর্ব তীরে বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর স্রোত সরাসরি পশ্চিম তীরে আঘাত হানে। আট কিলোমিটার অংশে ভাঙ্গনেরোধে কোন ব্যবস্থা না থাকায় একের পর এক ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে থাকে। গত দুই মাসে দুটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক বসতবাড়ী-ফসলী জমি-হাট বাজার বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে মানুষগুলোর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অনেকের পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। একেকটি পরিবার প্রায় ২০-৫০ বার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এছাড়া ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত পরিবার। শুধু তাই নয় অন্যত্র বসতভিটা সরিয়ে নেয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নদীটি এখন ব্রহ্মপুত্র রক্ষার সামান্য দুরে অবস্থান করছে। যে কোন মুহুর্তে বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে ওই এলাকার হাজার হাজার বসতভিটা ভেঙ্গে যাবার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরে অনায়াসে পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে শহরের মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
ভাঙ্গন কবলিত মানুষের অভিযোগ, ভাঙ্গন শুরু হলে পাউবো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়না। এ অবস্থায় অসহায় মানুষগুলো ভাঙ্গন রক্ষায় সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন।
চর বাহুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজলুল হক জানান, বিদ্যালয়টি মাত্র নদী থেকে ২০ ফুট দুরে অবস্থান করছে। যে কোন মুহুর্তে বিলীন হয়ে যাবে। বসতভিটা বিলীন হওয়ায় অনেক পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীও অর্ধেক কমে গেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশালী আবুল কাশেম ফজুলল হক বলেন, গত দুই মাসের ভাঙ্গনের কারণে ব্রহ্মপুত্র বাঁধ নদীর মাত্র ২০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। প্রতিদিন ভাঙ্গছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে সিরাজগঞ্জ শহর ও এলাকার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এ জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ফান্ডের স্বল্পতার কারণে অনুমোদন দেয়া হয়নি। অনুমোদন পেলে ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/২৪ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল