যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানি হুন্দাইয়ের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪৭৫ জনকে আটক করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা শাসনামলে এটি সবচেয়ে বড় কর্মস্থলভিত্তিক অভিযান বলে জানা গেছে। তিন হাজার একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই কারখানা থেকে আটককৃতদের বেশিরভাগই কোরিয়ান নাগরিক।
কোরিয়ান এই কোম্পানিটি সেখানে বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরির কাজ করছিল গত এক বছর ধরে। এই অভিযানের জন্য 'উদ্বেগ ও ক্ষোভ' প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিজেদের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা শ্রাংক জানান, ‘এই অপরাধের অনুসন্ধান চালানোর জন্য বিচার বিভাগীয় অনুমতি পেতে আমরা বহু মাস ধরে প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, সাক্ষাৎকার নিয়েছি, নথি সংগ্রহ করেছি এবং সেই প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি সাধারণ অভিবাসন অভিযান নয় যেখানে অফিসাররা গিয়ে মানুষদের তুলে নিয়ে যায়। বরং এখানে সাক্ষাৎকার, নথিপত্র সংগ্রহ এবং বিচারিক অনুমোদনের পর অভিযান পরিচালিত হয়েছে।’
আটক হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বলে জানানো হয়েছে। এদের অনেকেই অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করে কাজ করছিলেন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট জানায়, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বর্তমানে জর্জিয়ার ফোকস্টনে অবস্থিত একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
হুন্দাই মোটর কম্পানি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করছে। আমাদের জানা মতে, আটক ব্যক্তিদের কেউ সরাসরি হুন্দাইয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত নন।’
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং কোরিয়ান নাগরিকদের অধিকার অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।’
কোরিয়া আরো জানিয়েছে, তারা কূটনীতিকদের ঘটনাস্থলে পাঠাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘তারা অবৈধ অভিবাসী এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট শুধু তার কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই, একটি স্থিতিশীল ও বৈধ শ্রমবাজার চাই।’ তিনি আরো দাবি করেন, ‘এই শ্রমিকদের অনেকেই বাইডেন সরকারের সময়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে।’
এই অভিযানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুই মূল এজেন্ডা—দেশীয় শিল্পোন্নয়ন এবং অবৈধ অভিবাসন দমনের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। হুন্দাইয়ের পার্টনার এলজি এনার্জি সল্যুশনস ঘটনাস্থলে তাদের ব্যাটারি কারখানার নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে। জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প হুন্ডাই প্রকল্পকে রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প বলে বর্ণনা করেছিলেন, যা প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে কর্মসংস্থান দিয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে দাবি করেছিলেন, অভিবাসীরা আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছেন এবং তিনি ক্ষমতায় ফিরে এসে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযান শুরু করেন দেশজুড়ে। এ অভিযানে কোরিয়ান ছাড়াও ধরা পড়েছে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও। সূত্র: বিবিসি।
বিডি প্রতিদিন/এএম