প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনক্রমে পরিচালিত একটি গোপন মিশনে মার্কিন নেভি সিলের গুলিতে বেশ কয়েকজন উত্তর কোরীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল। ২০১৯ সালে এই ঘটনাটি ঘটেছিল বলে জানা গেছে। তখন ওয়াশিংটন এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালের শীতকালের এক রাতে মার্কিন নেভি সিলের একটি দল দুটি ছোট সাবমেরিনে করে উত্তর কোরিয়ার উপকূলে পৌঁছায়। তাদের লক্ষ্য ছিল একটি ইলেকট্রনিক গুপ্তচর যন্ত্র স্থাপন করা।
কিন্তু মিশন চলাকালীন উত্তর কোরীয় একটি মাছ ধরার নৌকা তাদের দিকে চলে আসে এবং জেলেরা টর্চলাইট দিয়ে আলো ফেলতে শুরু করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পরেই আমেরিকান সৈন্যরা গুলি চালায়। এতে ছোট মাছ ধরার নৌকাটির সকল আরোহী নিহত হন। হতাহতের সঠিক সংখ্যা অবশ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে ২০১৮ সালের শরতে এই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন। সেই সময়ে তিনি উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ঐতিহাসিক আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের একটি কৌশলগত দুর্বলতা দূর করা, যাতে ওয়াশিংটন উত্তর কোরীয় নেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা শুনতে পারে এবং আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের আগে একটি সুবিধা লাভ করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেভি সিলের দলটি যখন মাছ ধরার নৌকাটির মুখোমুখি হয়, তখন মিশনটি ভেস্তে যায়। নৌকাটিতে থাকা দুইজন বা তিনজন আরোহী নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক ছিলেন যারা ঝিনুক তুলছিলেন। ডিভাইসটি স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়ে মার্কিন নৌসেনারা একটি পারমাণবিক সাবমেরিনে ফিরে আসে যা তাদের তুলে নেওয়ার জন্য অগভীর জলে এসেছিল।
মার্কিন গোয়েন্দা স্যাটেলাইটগুলো ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি লক্ষ্য করে কিন্তু উত্তর কোরিয়া ঠিক কী ঘটেছিল তা জানতে পেরেছিল কি না তা স্পষ্ট নয়।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, পেন্টাগনের একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় পরে দাবি করা হয় যে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সামরিক বাহিনীর নিয়মানুসারে যৌক্তিক ছিল।
২০১৮ সালের জুন মাসে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প এবং কিম জং উনের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক হয়। তারা একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন এবং পিয়ংইয়ংয়ের সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা করেন কিন্তু সেই আলোচনা ব্যর্থ হয়।
ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের শেষ শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ভেঙে গেছে এবং উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে পিয়ংইয়ং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কঠোর নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। উত্তর কোরিয়া বরাবরই বলে আসছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল