বগুড়ার শেরপুরে মহাসড়কের ওপর বসছে ধানের হাট। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট থেকে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। আহত হচ্ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। কিন্তু দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়ক থেকে এই অবৈধ হাট সরানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্যোগ নেই। এদিকে প্রায় বিশ বছর আগে খাজনামুক্ত হিসেবে হাটটি চালু করা হয়। তবে পরবর্তীতে স্থানীয় সংঘবদ্ধ একটি চক্র জোরপূর্বক খাজনা আদায় করেই চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সদর থেকে মহাসড়ক হয়ে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে শেরুয়া বটতলা এলাকা। সময়ের ব্যবধানে এই এলাকাটি ধান-চালের ব্যবসাকেন্দ্রিক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। গড়ে তোলা হয় বিপুল সংখ্যক ছোট ও বড় ধরনের মিল-চাতাল।
জানা যায়, শেরুয়া বটতলা থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার উত্তরে মির্জাপুর হাট। এই হাটের ইজারাদার জোরপূর্বক বাড়তিহারে খাজনা নিতেন। এই কারণে ১৯৯৬ সালের দিকে শেরুয়া বটতলা এলাকায় খাজনামুক্ত ধানের হাট চালু করা হয়। কয়েক বছরের মাথায় এই হাটেও খাজনা আদায় শুরু হয়। যা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। সপ্তাহের রবিবার, মঙ্গলবার ও শুক্রবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শেরুয়া বটতলায় এই অবৈধ ধানের হাট বসে। ভোর থেকেই আশপাশেসহ দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও ব্যাপারিরা এখানে ধান নিয়ে আসেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের ন্যায় মঙ্গলবারও শেরুয়া বটতলা এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ওপর ধানের হাট বসেছে। মহাসড়ক ঘেঁষে ধান ভর্তি যানবাহনগুলো রাখা হয়েছে। আবার যানবাহন থেকেও বস্তা নেমে সারিবদ্দভাবে রাখা হয়েছে। হাট চলাকালীন সময় পর্যন্ত মহাসড়ক ঘিরে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। হাটে আসা বিক্রেতা-ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ মহাসড়কের ওপর এবং ঘেঁষে এলোমেলোভাবে চলাফেরা করছেন। এছাড়া মহাসড়কের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার। দু’পাশে ঘিরে গড়ে ওঠা স্থায়ী-অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অনেক। মহাসড়কের ওপর ও দু’পাশে দিয়ে মানুষ গিজগিজ করছে। এ সময় কথা হয় আবুল কালাম, আব্দুল আজিজ, জেল হক, রোস্তম আলীসহ একাধিক ধান বিক্রেতার সঙ্গে। তারা জানান, মহাসড়ক ঘেঁষে বসানো হয়েছে ধানের হাট। জায়গার অভাবে হাট চলে আসে মহাসড়কের ওপর। আমদানি-বিক্রি চলে মহাসড়ক ঘিরে। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় সব দুর্ঘটনা।
আব্দুল বারী, আমিনুল ইসলাসসহ একাধিক পথচারী বলেন, নানা কারণে শেরুয়া বটতলা বাজারে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে অন্যতম কারণ মহাসড়কের ওপর অবৈধ ধানের হাট। হাটের জন্য দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অনেকেই।
এদিকে খাজনা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে আদায়কারী রেজাউল করিম ও প্রদীপ বলেন, মহাজন (নাম বলেননি) নিয়মানুযায় হাট ডেকে নিয়েছেন। সে হিসাবে আমরা খাজনা আদায় করছি। মহাসড়কে হাট বসানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে স্বীকার করে দুই আদায়কারী জানান, একসময় এই হাটটি আপনা আপনি অন্যত্র সরে যাবে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম সরোয়ার জাহান বলেন, হাটটি সম্পূর্ণ অবৈধ। মহাসড়কের ওপর বা পাশে হাট বসানোর কোন সুযোগ নেই। হাটটি উচ্ছেদের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে সাড়া পেলেই এই হাট উচ্ছেদ করা হবে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ জানুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব