ভারতের ইতিহাসে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, সেনা কর্মকর্তা ও তারকারা। সাম্প্রতিক গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরও দীর্ঘ হলো এই তালিকা।
গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর মৃত্যু
গুজরাটের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় লন্ডনগামী বিমানটি ভেঙে পড়ে। বিমানে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজয় রূপাণী। লন্ডনে থাকা মেয়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। স্ত্রী আগেই গিয়েছিলেন। দু’জনের একসঙ্গে ফেরার পরিকল্পনা ছিল ১ জুলাই।
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের মৃত্যু: চালকের ভুলের বলি
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুর কুন্নুরে এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক (CDS) বিপিন রাওয়াত এবং তাঁর স্ত্রী মধুলিকা। হেলিকপ্টারটি ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি গাছে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে। ১৪ জন আরোহীর মধ্যে ১৩ জনই মারা যান। তদন্তে ‘মানবিক ভুল’কে দুর্ঘটনার কারণ বলা হয়।
সঞ্জয় গান্ধীর শেষ ভ্রমণ: স্টান্ট দেখাতে গিয়ে যায় প্রাণ
১৯৮০ সালের ২৩ জুন দিল্লির সফদরজং বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সঞ্জয় গান্ধীর নতুন পিটস এস-২এ বিমান। মাত্র ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইং অভিজ্ঞতা থাকা সঞ্জয় নিজের হাতে স্টান্ট দেখাতে গিয়ে মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণ হারান। বিমান ভেঙে পড়ে ঘটনাস্থলেই ৩৩ বছর বয়সী সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়। মা ইন্দিরা গান্ধী ছুটে গেলেও ছেলেকে আর জীবিত ফিরে পাননি।
পরমাণু বিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গীর ভাবার রহস্যময় মৃত্যু
১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ বিমান আল্পস পর্বতের মঁ ব্লাঁ অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ছিলেন ভারতের পরমাণু শক্তির জনক হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা। দুর্ঘটনায় ১০৬ যাত্রী ও ১১ কর্মীর মৃত্যু হয়। ব্ল্যাক বক্স না মেলায় এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম হয়। অনেকের মতে, ভাবার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা ছিল না।
দক্ষিণী অভিনেত্রী সৌন্দর্যের করুণ পরিণতি
২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল দক্ষিণী অভিনেত্রী সৌন্দর্য বেঙ্গালুরু থেকে করিমনগর যাওয়ার পথে ব্যক্তিগত এক ইঞ্জিনের বিমানে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সঙ্গে ছিলেন ভাই ও এক বিজেপি কর্মী। বিমানটি উড্ডয়নের পাঁচ মিনিটের মাথায় ভেঙে পড়ে। তিনজনই পুড়ে মারা যান। অভিনেত্রী সৌন্দর্য তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
কানপুরের আগুনের গোলায় শেষ মাধবরাও সিন্ধিয়ার জীবন
২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত বিমানে উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীর পথে রওনা দেন কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাধবরাও সিন্ধিয়া। বিমানে আটজন ছিলেন। দুর্ঘটনার পর এতটাই দেহ পুড়ে যায় যে শনাক্ত করা কঠিন হয়। মাধবরাওয়ের গলার লকেট দেখে তাঁর দেহ শনাক্ত করা হয়। বিমানে থাকা সকল যাত্রী মারা যান।
মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির মৃত্যুর ধোঁয়াশা
২০০৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির হেলিকপ্টার বেল ৪৩০ রায়লসীমার জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারায় বলে জানানো হয়। হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। সারা দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া।
অরুণাচল প্রদেশের দোরজি খান্ডুর মর্মান্তিক মৃত্যু
২০১১ সালে অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দোরজি খান্ডু তাওয়াং থেকে ইটানগর যাওয়ার পথে পবন হংস হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনায় পড়েন। সেলা পাস অঞ্চলে হেলিকপ্টার নিখোঁজ হয়। পাঁচ দিন পর চিন সীমান্তের কাছে লুগুথাং-এ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আবহাওয়া ও কারিগরি ত্রুটিকে দুর্ঘটনার কারণ বলা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আশিক