রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৩ জনে পৌঁছেছে। সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ধসে এ দুর্ঘটনায় ঘটে। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাঙামাটিতে চার সেনা কর্মকর্তাসহ ৯০ জন, চট্টগ্রামে ২৭ জন ও বান্দরবানে ৬ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি : রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ৯০ জন নিহত ও প্রায় ৪০জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। উদ্ধার কাজে নেমেছে- সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্র জানা গেছে, মঙ্গলবার টানা বর্ষণে রাঙামাটি জেলার রাঙামাটি সদর, কাইখালী উপজেলা, বিলাইছড়ি উপজেলা, কাপ্তাই উপজেলা ও জুরাছড়ি উপজেলায় পাহাড় ধসে তারা নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, শহরের ভেদভেদী নতুন পাড়া এলাকা, রাঙাপানি, মানিকছড়ি, রিজার্ভ বাজার তবলছড়িসহ বিভিন্ন এলকায় মাটি চাপা পড়েছে আরও বেশ কিছু বসতঘর। তাদের উদ্ধারে চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
রাঙামাটি জোনের জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল মো, রেদওয়ানুল হক জানান, রাঙামাটি শহর থেকে ২ কি.মি. দূরে শহরের প্রবেশমুখে মানিকছড়ি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাহাড় ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে, এমন খবরের ভিত্তিতে রাঙামাটি সদর জোনের সেনাবাহিনীর একটি দল উদ্ধার কাজ চালাতে যায়। দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এসময় হঠাৎ নতুন করে পাহাড় ধস শুরু হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৪ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১২ সেনা। এ ঘটনায় আরও এক সেনা সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে পাহাড় ধস, দেয়াল ধস ও বজ্রপাতে নারী-শিশুসহ ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশে পাহাড়ধসে চারজন করে আটজন, নগরীর হালিশহরে দেয়ালধসে একজন এবং বাকলিয়ায় বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়। তাছাড়া দুই উপজেলায় আহত হয় অন্তত ১০ জন। আজ মঙ্গলবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে- নজরুল ইসলাম, সুজন, মোহাম্মদ ইসলাম নামে তিন ব্যক্তি ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা রয়েছেন। তাছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন রয়েছেন।
চন্দনাইশ উপজেলায় (বান্দরবানসংলগ্ন) ধোপাছড়ি সম্বুনিয়া গ্রামে পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় দাদি মকাং (৫৫) ও নাতি ক্যসা খিয়াং (৭) মারা যায়। একদিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসা ১৩ বছরের কিশোরী মেম্রাউ ঘুমন্ত অবস্থায় পাহাড়ধসে মারা যায়। পরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বান্দরবান হাসপাতালে নেয়া হলে মৃত্যু হয় বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সানুকিয়াংকের (১৮)।
আহতরা হলেন- চেইন খিয়াং ও ছিলাও খিয়াং। কুহালং ইউপির সদস্য উসানং খিয়াং বলেন, পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, ভোররাতে ইসলামপুর ও রাজানগরে পাহাড়ধসে বেশ কয়েকটি পরিবারের ১৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, নগরীর হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজার এলাকায় ঝড়ে বাড়ির দেয়াল ধসে মৃত্যু হয় মোহাম্মদ হানিফ (৪৫)। এ ঘটনায় তার স্ত্রীও আহত হন। এদিকে, নগরের বাকলিয়ার চাকতাই এলাকার ওসমানিয়া গলিতে মঙ্গলবার ভোরে বজ্রপাতে নিহত হন মোহাম্মদ দেলোয়ার (১৯)। তিনি একই স্থানীয় একটি দোকানের কর্মচারী। সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর রামপুরের মোহছেন আউলিয়া গ্রামের মো. ইলিয়াছের ছেলে দেলোয়ার।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সোমবার দুপুরে ১২টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল মাসুদ বলেন, চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি কানগুনিয়া এলাকায় পাহাড়ধসে তিন শিশুসহ চারজন এবং রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ফায়ার সর্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, পাহাড় ধসে নিহতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি গাড়ি কাজ করছে। তবে সড়কে পানি থাকায় ঘটনাস্থলে গাড়ি পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান : বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন।
নিহতরা হলেন- শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫) ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা (১৮)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিক উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/১৩ জুন ২০১৭/এনায়েত করিম