পঞ্চগড়ের লাল সোনা হিসেবে খ্যাত মরিচ চাষ করে এবার মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। বাজার মূল্য দিন দিন কমছে বলে চাষের দামও ঘরে উঠছেনা তাদের।
কৃষকেরা জানায় গত বছর তারা মরিচের ভাল দাম পেয়েছিল। ভাল দামের আশা আর অনুকূল আবহাওয়া ছিল বলে এবার মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন তারা। ফলনও হয় বাম্পার। গত দুমাস থেকে প্রত্যন্ত এলাকার সড়ক-মহাসড়ক, মিল চাতাল, বাড়ির আঙ্গিনা, ঘরের চালে মরিচ শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে নারী শ্রমিকরা। ভাল মুজুরী নিয়ে ক্ষেত থেকে মরিচ তোলার কাজ করছে শ্রমিকরা। কিন্তু শুরুতে ভাল মূল্য পাওয়া গেলেও দিন দিন তা কমতে থাকে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ শুকনো মরিচ ৩ হাজার ৪শ' টাকা থেকে ৪ হাজার ২শ' টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে দর নেমেছে অর্ধেকে। এখন পঞ্চগড়ের বাজারগুলোতে কৃষককে মাত্র ২ হাজার টাকায় একমণ মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে ।
তেতুঁলিয়া উপজেলার পানিহাগা গ্রামের চাষি সফিকুল ইসলাম জানায়, পাকা লাল মরিচ তুলতে, ভাড়া, শকানো, সার, সেচ দিয়ে এক কেজি মরিচ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আমি এক একর মরিচ করেছি। বাজারে ১ কেজি মরিচ মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আমার খরচটাই উঠছেনা। আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর এলাকার উত্তম রায় জানায়, ১ একর জমিতে মরিচ লাগিয়ে এবার লোকশান গুনতে হচ্ছে । সরকার উদ্যোগ না না নিলে আমরা পথে বসে যাবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলার অধিকাংশ এলাকার মাটি বেলে-দোঁআশ হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা কম থাকে। দীর্ঘকাল থেকে এ অঞ্চলের কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন মৌসূমে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি মরিচ চাষ করে আসছে। বাজারে শুকনো মরিচের চাহিদা ও দাম ভাল থাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে মরিচের আবাদ। খরচ ও সময় কম লাগায় কৃষকরা মরিচ আবাদেই বেশী ঝুঁকছে। বর্তমানে জমি থেকে পাকা মরিচ তোলার মৌসূম চলছে। কৃষক-কৃষাণীরা এখন গাছ থেকে পাকা মরিচ বাড়িতে তুলে আনতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাদের কাজে যোগ দিয়েছে গ্রামের নারী কৃষি শ্রমিকরা। এক ডালি মরিচ তুলে দিতে পারলেই পারিশ্রমিক হিসেবে তারা পাচ্ছেন ২৫-৩০ টাকা। বর্তমানে কয়েক হাজার নারী শ্রমিক প্রতিদিন ১০-১৫ ডালি মরিচ তুলে তারা আয় করছে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা পর্যন্ত।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসূমে পঞ্চগড় জেলায় ৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আর প্রতি হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২ মেট্রিক টন হিসেবে জেলায় শুকনো মরিচ উৎপাদিত হবে প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু আটোয়ারী উপজেলায় জেলার প্রায় অর্ধেক সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। এখানেই উৎপাদন হবে প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন।
আটোয়ারী উপজেলা সদরের নলপুকুরি গ্রামের কৃষক মনোজ রায় হিরু জানান, এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। মরিচের ফলন ভাল হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে পাকা মরিচ তুলে তা শুকিয়ে বাজারে ৩২ মন মরিচ বিক্রয় করেছেন। শুরুতে দাম পেয়েছিলেন ভালো । কিন্তু বর্তমানে লোকশানে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে ক্ষেত থেকে পাকা মরিচ তুলতে খরচ হচ্ছে অনেক বেশী। মরিচের বেশী আবাদ হওয়ায় দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। এবার শুরু থেকেই ৩০ টাকা ডালিতে মরিচ তুলতে হয়েছে। প্রতি চার কেজি লাল কাঁচা মরিচ তুলতে এখন খরচ হচ্ছে ৪০ টাকা। শেষের দিকে দিতে হবে ৫০ টাকা করে। চার কেজি পাঁকা মরিচ শুকালে এক কেজি শুকনো মরিচ হয়। এক কেজি শুকনো মরিচের বর্তমান বজার মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। তিনি জানান, মরিচের দাম না বাড়ালে কৃষক মাঠে মারা যাবে।
বিডি প্রতিদিন/১৪ জুন ২০১৭/হিমেল