পাবনায় সরকারি খাদ্য গুদামে গম সরবরাহ করাকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করেছে।
সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে জেলার আটঘড়িয়া উপজেলা খাদ্য গোডাউনের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামের গম সংগ্রহ চলছিল। এ সময় গম সরবরাহকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ওই এলাকার ইমরান, ফরহাদ, আকাশ ও আল আমীন নামের ৪ জনকে আটক করে।
বর্তমানে আটঘরিয়া বাজার এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আটঘরিয়া বাজারের ব্যাবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান পলাশ ও তার ক্যাডার লিটন এবং আটঘরিয়া পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন দুইটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে গম সরবরাহ করে আসছিল। দুই গ্রুপই তাদের গম খাদ্য গুদামের সামনে স্তুপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ট্রাকের লোড আনলোড করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতরা পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় আটঘরিয়া বাজারে চরম আতংক ছড়িয়ে পরে। লোকজন দোকান পাট বন্ধ করে দ্রুত বাজার থেকে সটকে পরে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই খাদ্য গুদামে রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের নিকট থেকে গম নেয়ার অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয় কৃষকেরা। আটঘরিয়ার অসাধু খাদ্য কর্মকর্তার যোগসাজসে ওই দুই রাজনৈতিক সিন্ডিকেট প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে বিশেষ কারসাজির মাধ্যমে খাদ্য গুদামে গম সরবরাহ করে আসছেন।
স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম, দেবত্তোর গ্রামের আব্দুল মালেক, আহম্মদসহ বেশ কিছু কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমরা গম দিতে গেলে কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে গম নিতে চায় না। অপর দিকে এই চক্রের সাথে যোগসাজসে গোডাউনে খারাপ পচাঁ গম সংগ্রহ করে। প্রকৃত কৃষদের কাছ থেকে শস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে না। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সাথে ওই সিন্ডিকেটের অবৈধ লেনদেন রয়েছে। প্রতিটনে এক হাজার করে টাকা নেন ওই কর্মকর্তা।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গম দেয়াকে কেন্দ্র করে একটি ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমাদের খাদ্য গুদাম সংরক্ষণ এলাকার ভেতরে হয়নি। এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত আমার জানা নেই। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গম সংগ্রহের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তালিকাভুক্ত কৃষকের মাধ্যমে গম সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, আটঘরিয়া খাদ্য গুদামের সামনে গম দেয়াকে কেন্দ্র করে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। গম সংগ্রহে অনিয়মের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুসারে গম সংগ্রহের কাজ চলছে। এখানে কৃষক ছাড়া গুদামে সরবরাহের নিয়ম নেই। তবে রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে কৃষকদের তালিকা নিয়ে যদি কেউ গম দিয়ে থাকে আমাদের কিছুই করার থাকে না। আমরা তাদের কাছে জিম্মী।
বিডি প্রতিদিন/ ১৯ জুন,২০১৭/ ই জাহান