ময়মনসিংহে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া ১১ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ২০ শতক জমি দিয়ে মীমাংসা করেছেন সমাজপতিরা। আর এই রায় দিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য লাল মিয়া মন্ডল।
এর আগে, গত সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের সজিব মন্ডল (২০) নামে এক বখাটের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
জানা যায়, অভিযুক্ত সজিব আব্দুল কাদির মন্ডলের সন্তান এবং লাল মিয়া মন্ডলের নাতি। আর সে সুবাদেই দাদা লাল মিয়া ধর্ষক নাতিকে বাঁচাতে এমন রায় দেন। বখাটে সজিবের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আরো কয়েকটি ইভটিজিং এর অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় কেউ প্রতিকার পান না।
এদিকে, গ্রামের প্রভাবশালীদের চাপের মুখে আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি নির্যাতিত ওই পরিবার। অনেকটা বাধ্য হয়েই রায়টি মেনে নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার।
ভুক্তোভোগী পরিবার বলছে, 'জমি লেইক্ষা দিছে মেয়ের নামে। অহন ঘাটাঘাডি করলে সম্যসা। মুরুব্বীরা স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দিছে। আমরা গরীব, এর থেইক্কা বেশি আর কী বিচার পামু?'
জানা যায়, গত সোমবার দুপুর ২টার দিকে বসত ঘরে একা পেয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে বখাটে সজিব। বিষয়টি কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই পরিবারে জানাজানি হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ধর্ষকের দাদা লাল মিয়া মন্ডল বিষয়টা রাতের মধ্যেই সমাধান করার আশ্বাস দেন। সেই সাথে নির্যাতিতার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ওই দিন রাত ১০টায় লাল মিয়া মন্ডল তার ভাতিজা নজরুল ইসলাম মন্ডলের বাড়িতে সালিশ ডাকেন। সালিশে নির্যাতিত কিশোরীর ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ হয় ২০ শতাংশ (দুই কাঠা) জমি।
সালিশ দরবারে আরো উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় শামসুল হক মন্ডল, কালা মিয়া মন্ডল, মউজুল হক মন্ডল প্রমুখ।
পরদিন মঙ্গলবার গৌরীপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ধর্ষক সজিবের মায়ের নামে থাকা জমি থেকে ২০ শতাংশ জমি ওই কিশোরীর নামে লিখে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে ওই জমির দলিল লেখক এনামুল হক মন্ডলও লাল মিয়া মন্ডলের ভাতিজা।
২০ শতক জমি লিখে দেবার বিষয়ে জানতে দলিল লিখক এনামুল হক বলেন, দলিল সম্পাদনা হয়ে গেছে। রবিবার দলিল হয়ে যাবে। আর অভিযুক্ত মাতব্বর লাল মিয়া মন্ডলের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলে মামুন পরিচয়ে একজন বলেন, দাদা বাড়িতে নাই। এরপরই মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে স্পষ্ট কিছু জানি না।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার আহম্মেদ জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/২০ অক্টোবর ২০১৭/এনায়েত করিম