এখন দেশের এই পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন? আগে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এমন মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গতকাল সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পাটগ্রাম আমাদের চোখের সামনে, এখন দেশে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই অবস্থায় কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। এ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আমরা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি।’ ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে এবং সবার অংশগ্রহণে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমরা সব সময় মব পলিটিকসের ঘোর বিরোধী। এটা ১৯৭২ সাল থেকেই আমরা বলে আসছি।’ পরে তিনি বেলা ৩টায় রংপুরের জনসভায় যোগ দিতে সৈয়দপুর ত্যাগ করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচন ইনশাল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।’ গতকাল বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের পর নির্বাচন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ চার দফা দাবিতে রংপুর মহানগর ও জেলা জামায়াতের বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকেই জিলা স্কুল মাঠে সমবেত হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। জুমার নামাজের পরপরই মাঠ পূর্ণ হয়ে আশপাশ এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জনসভায় রংপুর বিভাগের আট জেলার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া হবে না, কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’
আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে পাটগ্রামে কী হচ্ছে আপনারা দেখতে পারছেন। শুধু পাটগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলেছে একদল লোক। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সেই সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে আমরা বলব মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। প্রশাসনকে ব্যবহার কিংবা কালো টাকার খেলা সহ্য করা হবে না। আপনাদের মনে রাখতে হবে আবু সাঈদদের সঙ্গীরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তারা আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে। আমরা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখব।’
রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাহবুবার রহমান বেলাল, শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, ইসলামী আন্দোলন রংপুর মহানগরের সভাপতি আবদুর রহমান কাশেমী, গণঅধিকার পরিষদের জেলা আহ্বায়ক শেরে খোদা আসাদুল্লাহ, হিন্দুধর্মাবলম্বী যোগেন চন্দ্র বর্মণসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
নির্বাচন নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ঘিরে আমরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্র লক্ষ করছি। বহু ধরনের কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি। বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আলামত আমরা বুঝতে পারছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিই, শেখ হাসিনার সব বাহিনী ছিল। জায়গায় জায়গায় নিজেদের লোক বসিয়ে ক্যাডার-মাস্তানদের দিয়ে এরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। কিন্তু জনগণের জাগরণ-বিস্ফোরণ যখন হয়েছে, তখন কি তাদের কেউ রক্ষা করতে পেরেছে? তাহলে জনগণ এত মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না। এ লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন প্রিয় দেশের বুকে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্ন থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি এসব কিছুর নির্ভুল পূর্ণাঙ্গ সমাধান হচ্ছে আল্লাহর কোরআন ও রসুলের (সা.) শাসন।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫৪ বছর জামায়তে ইসলামী সাধ্যমতো জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছে। জনগণের প্রতিটি ন্যায় দাবি আদায়ের জন্য সমানতালে ঘরে-বাইরে লড়াই করেছে। এ দেশের জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন করেছে। জামায়াতে ইসলামী প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছে। ১৯৯১ সালে ওই কায়দায় প্রথম একটি নির্বাচন হয়েছিল। এরপর আরও দু-তিনটি নির্বাচন হয়েছে। তারপর কেয়ারটেকার সরকারকে খেয়ে ফেলা হয়েছে।’ জামায়াত নেতাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে দুজন আমির, দুজন নায়েবে আমির, দুজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও একজন নির্বাহী পরিষদের সদস্যকে আমাদের বুক থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেসব নেতা বেঁচে থাকলে এ জাতিকে আশা জাগানিয়া কথা বলতেন। শহীদরা আমাদের মুক্তি জন্য, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার জন্য লড়াই করেছিলেন। আমি যুবকদের বলতে চাই-তোমরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। লড়াই চালিয়ে যাও মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত।’