নিজেকে পাপ মুক্ত এবং স্বর্গীয় পিতা মাতা আত্মীয় স্বজনের মঙ্গল কামনায় মধুকৃষ্ণের ত্রয়োদশ তিথি উপলক্ষ্যে পঞ্চগড়ের করোতোয়া নদীতে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বিদের পূন্য স্নান উৎসব। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোয়লমারী এলাকায় করতোয়া নদীর উত্তর মুখী স্রোতে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই পুণ্য স্নান শুরু হয়। এ উপলক্ষ্যে নদীর দুই পারে বসেছে মেলা। ৪ দিন ব্যাপি এই স্নান উৎসবে আশে পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।
প্রতিবছরের মতো এবারো বোদা উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় গঙ্গা মন্দির কমিটি ও বারুণী স্নান উৎসব উপলক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করেছে।
স্থানীয়দের মতে প্রায় তিনশত বছর ধরে বোদা উপজেলার কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের বোয়ালমারী এলাকায় করতোয়া নদীর উত্তর স্রোতে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথি উপলক্ষ্যে স্নানোৎসব পালন করে আসছে সনাতন ধর্মালম্বীরা। স্নান করতে এসে ভক্তরা দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করতে অনেকে মাথার চুল বিসর্জন দেন, পূজা অর্চনা করেন। তারপর তারা স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, হরিতকী, কাঁচা আম, ডাব, কলা ইত্যাদি অর্পণের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, যে স্থানে নদীর প্রবাহ সোজা উত্তরমুখী সেই স্থানে স্নান করা পুণ্যের কাজ। ধর্মীয় বিধান মতে জীবনে মরনে স্নান হলো হিন্দুদের এক অখণ্ড মহামন্ত্র। স্নানের পবিত্র ধারায় দেহ ও মনকে ধন্য করায় এক আত্মিক সাধনা। করতোয়া নদীর এই স্থানটি প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত উত্তরমুখী স্রোত প্রবাহিত হয়। তারা এখানে এসে পবিত্র হওয়ার জন্য মাথার চুল বিসর্জন ও পূজাআর্চনা করেন। এরপর করতোয়া নদীর উত্তরমুখী স্রোতে স্নান করেন। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকার শত শত পূজারী ও নর সুন্দররাও (নাপিত) এখানে আসেন।
নীলফামারী জেলার জলধাকা উপজেলা থেকে আগত হৈমন্তি রানী জানান, বাবা-মা স্বর্গে গেছেন। তাদের মঙ্গল কামনায় এখানে স্নান করতে এসেছি । তেঁতুলিয়া উপজেলার গিতালগছ গ্রামের লক্ষন চন্দ্র মালাকার জানান, অনেক পাপ করেছি । স্নান করে পাপমুক্ত হবো। পূণ্য অর্জন করবো। এই প্রার্থনা নিয়ে এখানে এসেছি।
স্নান উপলক্ষে এখানে ৭ দিন বারুনী মেলাও শুরু হয়েছে। সকল শ্রেণীর মানুষের বিনোদনের জন্য মেলায় যাত্রা, সার্কাস, মোটরসাইকেল খেলার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় নানান জিনিসপত্র বেচাকেনা চলবে।
কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল জানান, করতোয়া নদীর বারুণী স্নানঘাট সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান। এখানে পুণ্য স্নানের উদ্দ্যেশ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। সনাতন ধর্মালম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের পূণ্যকাজ সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা