রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু অর্থাৎ বৈসাবি। আর এ উৎসবকে ঘিরে বসানো হয়েছে মেলা। পার্বত্যাঞ্চলে ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহিনী সব কৃষ্টি সংস্কৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে মেলার সব স্টল। থরে থরে বসেছে হরেক রকম বাহারি পণ্যের স্টল। সবগুলো স্টল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাচাঙ ঘরের আদলে তৈরি। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে। আর এসব স্টলে স্থান পেয়েছে- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, খুমী ও খিয়াং নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি, সংষ্কৃতি, খাবার, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বিভিন্ন পণ্য সমগ্রি। এ মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করতে যোগ দিয়েছে অপর দু’পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও ভারতের শিল্পীরা। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে সর্বত্র এখন সাজ সাজ রব।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে ফিতা কেটে এ বৈসাবি উৎসবের সূচনা করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এসময় রাঙামাটি রিজিয়ন কামন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ রিয়াদ মেহেমুদ, রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা ও রাঙামাটি অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক এস এম শফি কামাল উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর মেলা প্রাঙ্গন মাতিয়ে তুলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রাদয়ের তরুণ-তরুণীরা। তাদের পায়ের নুপুরের ছন্দ আর বাঁশির সুরে ছুটে আসে হাজার হাজার দর্শক। মানুষের পদভারে কানায় কানায় ভরে যায় পুরো মেলা প্রাঙ্গন। মেলাকে ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র পরিণত হবে।
তাছাড়া মেলা চলাকালীন স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এ বৈসাবি উৎসবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী সাজে অংশগ্রহণ করেন। পুরোন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করতে মূলত এ বৈসাবি উৎসবটিকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে আয়োজন করা হয় বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু অর্থাৎ বৈসাবি মেলার উৎসব। এ মেলা চারদিনব্যাপী চলবে। রাঙামাটি, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করবে।
শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, পাচন রান্না প্রতিযোগিতাসহ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরন, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর জীবনধারার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা প্রাঙ্গন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম