অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম টেস্টে ১৫৯ রানে হেরে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমন হারের পর আম্পায়ারদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন ক্যারিবীয় কোচ ড্যারেন সামি। ম্যাচটিতে টিভি আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টকের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। নিজেদের বিপক্ষে রায় যাওয়ায় সেসব সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
সরাসরি আম্পায়ারের দিকে আঙুল তোলায় তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আইসিসি কোড অব কন্ডাক্টের ২.৭ অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করার অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলাকালে কোনো ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, ম্যাচ অফিসিয়াল (আম্পায়ার-রেফারি) কিংবা সংশ্লিষ্ট কাউকে নিয়ে সরাসরি সমালোচনা কিংবা অযাচিত মন্তব্যে’র বিষয়টি। সে কারণে ক্যারিবীয় কোচ লেভেল-১ পর্যায়ের অপরাধ করেছেন বলে ম্যাচ ফি’র ১৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সামির নামের পাশে বসেছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট, যা গত ২৪ মাসের মাঝে প্রথমবার। এমন অপরাধে সাধারণত ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশ পর্যন্ত এবং এক কিংবা দুটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের দেওয়া এই অভিযোগ ও শাস্তি মেনে নিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই উইন্ডিজ অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে অবশ্য বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য আম্পায়ারের শাস্তি দাবি করেছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোস্টন চেজও। তবে কোচের মতো তাকে কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে দেওয়া একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। যেখানে প্যাট কামিন্সের বলে অধিনায়ক রস্টন চেইজের এলবিডব্লিউ ও বিউ ওয়েবস্টারের বলে উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে শাই হোপের ক্যাচ নিয়ে।
দুটো আউট জন্ম দেয় বিতর্কের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দাবি, বল চেইজের পায়ে লাগার আগে ব্যাটে লেগেছিল। কিন্তু টিভি আম্পায়ার আদ্রিয়ান উইন্ডিজ অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ দেন। এরপর প্রথম ইনিংসে শাই হোপের ক্যাচ নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক আছে। যেখানে ক্যারির ক্যাচ নেওয়ার সময় বল মাটিতে স্পর্শ করছে বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু সেই ক্যাচ বৈধ ছিল কি না সেই বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে টিভি আম্পায়ার আদ্রিয়ান আউট দেন। দুটি সিদ্ধান্তই অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে যায়।
এছাড়া পুরো টেস্টে অন ফিল্ড আম্পায়ার ইংল্যান্ডের ব্রুস অক্সেনবরো ও ভারতের নিতিন মেননের বিতর্কিত কয়েকটি সিদ্ধান্ত ছিল। যা নিয়ে ম্যাচ শেষে আম্পায়ারদের এক হাত নেন সামি।
সরাসরি টিভি আম্পায়ারের ওপর সন্দেহ পোষণের কথা জানিয়ে সামি বলেছিলেন, ‘এই নির্দিষ্ট আম্পায়ারকে (হোল্ডস্টক) ঘিরে বিষয়টা আমার মনে প্রথম আসে ইংল্যান্ড সফর থেকেই। এটি হতাশাজনক। আমি শুধু চাই সিদ্ধান্তে যেন ধারাবাহিকতা থাকে। আমরা শুধু প্রক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা শুধু চাই সিদ্ধান্তগুলো যেন ধারাবাহিক হয়। যখন কোনো কিছুতে সন্দেহ থাকে, তখন সেটি যেন সবার ক্ষেত্রেই একইভাবে প্রযোজ্য হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এমন অবস্থায় যেতে চান না, যেখানে নির্দিষ্ট কোনো আম্পায়ারকে নিয়ে সন্দেহ জন্মায়। তবে যখন একের পর এক সিদ্ধান্ত একই দলের বিপক্ষে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠেই। আমাদের মতে, বলটি প্যাডে লাগার আগে ব্যাটে লেগেছিল, কারণ আমরা বলের (গতিপথের) বিচ্যুতি দেখেছি। আমি শুধু বলছি, আপনি যা দেখছেন তাই বিচার করুন। যদি দুটি একই রকম পরিস্থিতি হয় আর একটি আউট না হয়—তাহলে অন্যটিকে আউট দেওয়া আরও বেশি সন্দেহের জন্ম দেয়। আমি জানি না উনি (হোল্ডস্টক) কী দেখেছেন, তবে আমরা যে চিত্র দেখেছি, তাতে সিদ্ধান্তগুলো দুই দলের জন্যই সমান ন্যায্য মনে হয়নি।’
এদিকে, যাকে নিয়ে ক্যারিবীয় শিবির ক্ষুব্ধ সেই আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক গ্রানাডা ও জ্যামাইকায় টেস্ট সিরিজের পরবর্তী দুই ম্যাচেই অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে থাকবেন। আর টিভি আম্পায়ার হিসেবে দেখা যাবে নিতীন মেনন ও রিচার্ড কেটেলবোরোকে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম