তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বারুণী স্নান উৎসবে সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীদের ঢল নামে। প্রায় সাতশ বছর ধরে বছরের এই সময়ের নির্দিষ্ট তিথিতে গঙ্গা স্নানের পূণ্যলাভের আশায় পাহাড়ি জাদুকাটা নদীতে স্নান করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ০৭ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড থেকে রাত ১টা ২০ মিনিট ০৭ সেকেন্ড পর্যন্ত ধর্মমতে এবার স্নানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো পূণ্যার্থী ‘পূতপবিত্র নদীর জলে অতীতের গ্লানি ধুয়ে ফেলে নতুন জীবন লাভ করে’ আনন্দচিত্তে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী নবগ্রাম রাজারগাঁওয়ে শ্রী শ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মস্থান জাদুকাঁটা নদীতে বছরের ওই সময়টাতে সপ্তগঙ্গার পানি এক মোহনায় মিলিত হয় বলে বিশ্বাস করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। স্থানীয় গড়কাটি ইসকন মন্দির ও প্রশাসন বারুণী স্নান উৎসব তত্ত্বাবধান করে।
এদিকে, বারুণী স্নান উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অ ল থেকে আসা পূণ্যার্থীরা স্থানীয় অদ্বৈত্য মহাপ্রভুর আখড়াবাড়ি ও ইসকন মন্দিরের আশপাশের গ্রামে ভোর থেকে অবস্থান নেন। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে এসে কেউ কেউ উঠেন আগের দিন থেকে। স্নানের নির্দিষ্ট তিথি শুরু হলে হাজারো মানুষ গঙ্গা মায়ের জয়গান গাইতে গাইতে স্নান করতে নামেন নদীতে। দুপুর পর্যন্ত নদীর উভয় পাড়ে কয়েক কিলোমিটার এরাকাজুড়ে চলতে থাকে স্নান। বিকেলের দিকে পূণ্যার্থীদের ভিড় কমে আসে।
ছাতকের বাসিন্দা অনন্ত দাস জানান, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে জাদুকাটায় বারুণী স্নান করার মানত করেছিলাম দুই বছর আগে। গতবার সুযোগ পাইনি। এবার সবাইকে নিয়ে এসেছি। এভাবে কেউ মানত পূরণ করতে, কেউ সন্তান জন্মলাভের খুশিতে আবার কেউ বা গঙ্গা দেবীকে খুঁশি করতে এসেছেন স্নান করতে।
এদিকে বারুণী স্নান উৎসব উপলক্ষে জাদুকাটা নদীর দুই তীরে বসেছে মেলা। খাবার হোটেলসহ অস্থায়ী দোকানপাটে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। স্নান শেষে পূণ্যার্থীরা মেলা থেকে বাহারি পণ্য কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে উৎসবের এক আমেজ বিরাজ করছে জাদুকাটা তীরে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর