কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শীতকালীন সবজি শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন নবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও নবীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্যাপক আবাদ হয়েছে শীতের সবজি শিম।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা সবুজের সমারোহ, খাদ্য শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ও পাহাড়ি দ্বীপ খ্যাত দিনারপুর অঞ্চলের পানিউমদা ইউনিয়নের মাঠজুড়ে শুধু শিম ক্ষেত আর শিমের ক্ষেত।
নবীগঞ্জ কৃষি অফিসের হিসাব মতে, উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বড়চর, বড়গাঁও, রোকনপুর, খাগাউরা, দত্তগ্রামসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায় এলাকাগুলো যেন শিম দিয়ে ঘেরা। এসব গ্রামে শিমের ব্যাপক আবাদ হওয়ায় শিমের বাগান দেখলে যেন মনে হয় ‘শিম সাগর’। প্রতিটি কৃষক পরিবারই তাদের আবাদি জমিতে নানা পদ্ধতিতে শিম চাষ করছেন। মাঠের পর মাঠ ঘিরে রয়েছে সবুজ শিম ক্ষেত।
দিনারপুর এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান জানান, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই অঞ্চলে শিম চাষিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই অল্প পুঁজিতে বেশি আয়ের আশায় এই সবজি চাষ করছেন। আগামীতে এ অঞ্চলে শিমের আবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
লেখাপড়ার পাশাপাশি শিম চাষ করে লাভবান মাসুম আহমেদ বলেন, এক একর জমিতে শিম চাষ করে বর্তমানে পুরোদমে বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর তিনি ব্যাপক লাভবান হবেন বলে আশাবাদী। এ মৌসুমে শিম চাষে ব্যয় করেছেন ৩০ হাজার টাকা এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন, আরও ৩০-৩৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
রাজ আহমেদ, আব্দুল্লা আল মামুনসহ বেশ কয়েকজন চাষি জানান, ৭-৮বছর ধরে তারা শিম চাষ করছেন, শিম চাষে শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি। অন্য সবজির চেয়ে এর পরিচর্যা একটু বেশি করতে হয়। তবে তারা মনে করেন কষ্ট হলেও ফলন ভাল হলে শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হওয়া সম্ভব এবং বেশ লাভবান হয়েছেন। কিটনাশকের দাম একটু কমালে আরও বেশি লাভবান হওয়ার কথা জানান চাষিরা।
কৃষকদের ভাষ্যমতে, বিঘা প্রতি এ বছর পুরো ২০-২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন ভাল হলে এবং বাজার ভাল থাকলে প্রায় এক লাখ টাকার শিম বিক্রি সম্ভব। যদিও বর্তমান সময়ে বাজারে পাইকারি মূল্য কম থাকায় ২০-২৫ হাজার টাকার মতো খরচ করে ৫০-৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন অনেক কৃষক। পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি শিম ২৫ টাকা ধরে বিক্রি করছেন কৃষকরা।
স্থানীয় দিগম্ভর ও বড়চর পাইকারি কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে শিম উঠতে শুরু করছে। এখান থেকে মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বাহিরের অনেক পাইকাররা সবচেয়ে বেশি শিম কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই ট্রাক লোড হয় এখান থেকে। এখনকার কৃষকরা শিম চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আর্থিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম জানান, নবীগঞ্জবাসীর জন্য খুশির সংবাদ হচ্ছে, নবীগঞ্জের শিম দেশে বাহিরে রপ্তানির জন্য পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে। খুব শীঘ্রই নবীগঞ্জের শিম দেশের বাহিরেও বিক্রি হবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
তিনি বলেন, সর্বক্ষণিক শিম চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাওয়ায় আবাদ ও ফলন ভাল হওয়ায় দামও ভাল পাচ্ছেন কৃষকরা, এ মৌসুমে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। অনেকের দেখাদেখি অনেক নতুন কৃষক শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমাদের কাছে নানা পরামর্শ চাচ্ছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন