পরিবেশ দূষণকারী পরিত্যক্ত পলিথিন দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৫ আগস্টের শহীদ শেখ রাসেল, মানব সেবার পথিকৃৎ মাদার তেরেসা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্ট জনদের ভাস্কর্য তৈরি করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার রাহুৎপাড়া গ্রামের এমিলিয়া রায়।
নিজ হাতে পরম যত্নে তৈরি ভাস্কর্যগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চান তিনি। তবে ঘাতকের বুলেটে নির্মম হত্যার শিকার হওয়ার আগে শেখ রাসেলের বাঁচার আকুতিভরা নিপুণ ভাস্কর্যটি নিজের কাছেই রাখতে চান তিনি।
ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা, কবিতা লেখা, গান গাওয়া ও নিজের লেখা গানে কণ্ঠ দেয়ার প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল এমিলিয়া রায়ের। এসএসসি পাশ করার পরেই বিয়ে হয় আলফ্রেড রায়ের সাথে। সংসার জীবনে ঢুকে লেখাপড়া থেমে গেলেও থেমে যায়নি তার উদ্ভাবনী ইচ্ছা শক্তি। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে নতুন করে এমিলিয়া শুরু করেন ছাত্রজীবনে তার সেই উদ্ভাবনীর বহিঃপ্রকাশ। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী এমিলিয়া রায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ব-স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত সন্তানদের দেখভাল করে সময় পাড় করছেন সত্তর ছুই ছুই এমিলিয়া।
১৯৯০ সালের শুরুর দিকে কথা। একদিন নিজ বাড়িতে রান্না করা গরম কড়াই পাশের পলিথিন ব্যাগের উপর রাখায় পলিথিন ব্যাগ গলতে দেখে ওই পলিথিনের মাধ্যমেই নতুন কিছু উদ্ভাবনের পরিকল্পনা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন পরিবারের ফেলে দেওয়া পলিথিন ব্যাগ বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়ে ভাস্কর্য তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
এ পর্যন্ত নিজ হাতে পরম যত্নে তৈরি করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টে নিহত হওয়ার আগে শেখ রাসেলের বাঁচার আকুতিভরা নিপুণ ভাস্কর্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাদার তেরেসা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর পাক সেনা ও তাদের দোসরদের নির্মম নির্যাতনের ভাস্কর্য। এর মধ্যে মাদার তেরেসার ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৮০ কেজি পলিথিন ব্যাগ পুড়িয়ে। ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক ভাস্কর্য রয়েছে এমিলিয়া রায়ের সংগ্রহ শালায়।
বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক অসুস্থতায় হাটা চলায় সমস্যা হলেও থেমে নেই তার শিল্পকর্ম। নিরলসভাবে ভাস্কর্য তৈরি করে চলেছেন তিনি।
শুধু পলিথিন দিয়ে ভাস্কর্য তৈরিই নয়, গুণী শিল্পী এমিলিয়া তুলা দিয়ে আঁকা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিভিষীকা। এছাড়া মানুষের পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর মুখ মণ্ডল সংবলিত অপরূপ বাংলাদেশের মানচিত্র।
শিল্পী এমিলিয়া রায় জানান, জীবনশায়ান্নে তার শেষ ইচ্ছে নিজের হাতে তৈরি ভাস্কর্যগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়া। নিজ হাতে তৈরি সকল ভাস্কর্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নির্মম হত্যার শিকার হওয়ার আগে শেখ রাসেলের বাঁচার আকুতিভরা ভাস্কর্যটি নিজের কাছেই রাখতে চান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার তিন বছরের ছেলে তিনু রায় অসুস্থ্য হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। শেখ রাসেলের আকুতিভরা ভাস্কর্য্যের মধ্যে তিনি নিজের হারানো ছেলে তিনুকে খুঁজে ফেরেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, তিনি নিজে শিল্পি নন, তাই শিল্পকর্ম ততটা বোঝেন না। তারপরও যতটুকু দেখেছেন এমিলিয়া রায়ের শিল্পকর্মগুলো প্রসংশার দাবি রাখে এবং সবগুলোর গুণগত মানও ভালো। প্রধানমন্ত্রীর সাথে এমিলিয়া রায়ের দেখা করার বিষয়ে ইউএনও হিসেবে তার সরাসরি কিছু করার নেই। তবে তিনি (এমিলিয়া) যদি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার আবেদন করেন, সেই আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছে দিতে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন