নরসিংদীর শিবপুরে স্কুল ফান্ডের টাকায় সভাপতির নামে জমি ক্রয় করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই জমি স্কুলের নামে লিখে দেওয়ার কথা বলায় প্রধান শিক্ষকের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই সভাপতির বিরুদ্ধে।
পাশাপাশি স্কুলের রেজুলেশন খাতা, ব্যাংক একাউন্টের চেকবইসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারী বিধি-বিধান অমান্য করে সভাপতির সিধান্তে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্তের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাবো ইউনিয়নের খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার অজুহাতে রবিবার থেকে স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া ফুসে উঠেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মজিবুর রহমান খৈনকুটী। তিনি জানিয়েছেন, অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের অভিযোগে প্রেক্ষিতে জানা যায়, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাবো ইউনিয়নের খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের নানা বিষয় নিয়ে স্কুল ম্যানেজিং সভাপতি মজিবুর রহমান খৈনকুটীর সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাসাদ মিয়ার মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে এই বিরোধ আরো ঘনিভূত হয়। এরই মধ্যে স্কুল কমিটির সভাপতি গত মাসের ৩১ তারিখে সভার নাম করে স্কুলের দুইটি রেজুলেশন খাতা, ১টি নোটিশ খাতা, ব্যাংক একাউন্টের চেকবই সহ প্রয়োজনীয় কাগজ জোড়পূর্বক নিয়ে যান। পরে প্রধান শিক্ষকের রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে স্কুলের নামে জমি ক্রয় করার কথা বলে স্কুল ফান্ড থেকে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা তুলে নেয় স্কুল কমিটির সভাপতি। কিন্তু সেই টাকায় তিনি নিজ নামে জমি ক্রয় করে ফেলেন। এর প্রতিবাদ করায় সভাপতির সাথে প্রধান শিক্ষরের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারন করেন। দুই পক্ষের নানা বিরোধেরে জেরে স্কুলের সভাপতি প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন।
বিধি অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের এখতিয়ার শিক্ষা বোর্ডের থাকলেও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সিধান্তে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। এরই মধ্যে সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। উভয় পক্ষের পাল্টা পাল্টি অভিযোগ ও দলাদলির ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যাক্রম।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাসাদ মিয়া বলেন, স্কুল ফান্ডের টাকায় কেনা জমি সভাপতির নামে রেজিষ্ট্রি হয়েছে। এখন সেখানে সরকার চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সভাপতি ক্রয়কৃত জমিটি স্কুলের নামে লিখে দিচ্ছে না। এটা বলাতেই তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র মেতে উঠেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মজিবুর রহমান খৈনকুটী। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক ফাসাদ মিয়া নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। তিনি স্কুলের অর্থ আত্মসাত করেছে। দীর্ঘদিনে স্কুল ফান্ডের কোন হিসাব তিনি দেয়নি। হিসাব চাইলেই নানা গড়িমসি করেন। নানা ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ মেলায় তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। এই বরখাস্তের কপি বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অপর পক্ষের বক্তব্য শোনা হবে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থ নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল