বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান চালক এমরান হোসেন টুটুল (২৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে ঘটনার মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের নিকট থেকে খোয়া যাওয়া ওই অটোভ্যানটিও উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে এই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন ঘাতকরা। অটোভ্যানটি ছিনতাই করতেই চালক বন্ধু এমরান হোসেন টুটুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
আজ শনিবার বেলা দুইটায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম।
পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের গুয়াগাছি গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে সেলিম রেজা (২৫), একই ইউনিয়নের শরীফ সুঘাট গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন সেখের ছেলে সবুজ আলী সেখ (৩৬) ও পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার নাগেশ্বরগাতী গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মাজেম আলী সরকার (৪৫)।
শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃতদের শনিবার বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে এই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ঘাতক সেলিম রেজা। তার দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন বলেন, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেলিম রেজা। তাই একটি অটোভ্যান ছিনতাই করে বিক্রির পরিকল্পনা করেন তিনি। এজন্য এলাকার সবুজ আলী সেখের সঙ্গে আলোচনা করেন। এমনকি সেলিম রেজা কোনো ভ্যান ছিনতাই করে আনলে তা বিক্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব নেন সবুজ।
মূলত এরপরই অটোভ্যান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে মাঠে নামে সেলিম রেজা। একপর্যায়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার পাঁচগাছি গ্রামের এক বন্ধু এমরান হোসেন টুটুলের অটোভ্যান ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সে মোতাবেক গত ০১ মে সকালে কাজীপুর উপজেলার সোনামুখি বাজারে যান সেলিম রেজা। এরপর তিনশ’ টাকায় তার ভ্যানটি ভাড়া নিয়ে শেরপুর উপজেলায় আসে।
পরবর্তীতে নেশা করার কথা বলে খানপুর দহপাড়ার ফাকা মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে কৌশলে সেলিম ডান্ডি (গাম আটা) দিয়ে এমরান হোসেন টুটুলকে নেশা করায়। এর মধ্যে সন্ধ্যা নেমে আসে। তখন ঘাতক সেলিম রেজা ভ্যান চালক টুটুলের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর অটোভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায় সে। তবে ঘাতক সেলিম অত্যন্ত টাউট প্রকৃতির হওয়ায় ঘটনার পরপরই ছিনতাই করা ভ্যানটি সবুজ আলী সেখের কাছে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে আত্মগোপন করেন। সবুজ আলী সেখ সেই ভ্যানটি মাজেম আলীর নিকট তের হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার একদিন পর ২ মে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিহত ভ্যান চালক এমরান হোসেন টুটুলের লাশটি উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা নেওয়া হয়। টানা দুইমাস অনুসন্ধানের পর গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে ঘটনার মূলহোতা সেলিম রেজাকে গ্রেফতার করা হয়। সেইসঙ্গে তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী সবুজ আলী সেখ ও মাকেজ আলী সরকারকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় মাকেজ আলীর বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া অটোভ্যানটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর