বাগেরহাটের আধ্যাত্মিক পীর হযরত খানজাহান (রহ.) এর মাজারে সাড়ে ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলা শুরু হয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী বুধবার (২৩ মার্চ) পর্যন্ত।
প্রায় সাড়ে ৫শ বছর ধরে খানজাহান (রহ.) এর মাজারে বাংলা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ মেলা চলে আসছে বলে জানিয়েছেন মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী।
ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীরা জড়ো হন। ইতোমধ্যে মাজার ও মাজার সংলগ্ন এলাকায় হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটেছে। নিজের মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্ঠার আরাধোনায় মগ্ন থাকবেন তারা। শুধু মুসলিম নয়, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এসেছেন এখানে।
মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যে পশরা সাজিয়েও বসেছে দোকানিরা। দর্শনার্থী ও মেলায় আগত দোকানিদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
টুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ মোশারেফ হোসেন বলেন, সপ্তাহব্যাপী এই মেলায় এখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। এখানে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আমাদের ইউনিটের ফোন নাম্বার মাজারের বিভিন্ন দেওয়ালে এবং জনসমগমপূর্ণ স্থানে টানিয়ে দিয়েছি। এছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমাদের নাম্বার রয়েছে, কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের ফোন দিলেই আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যাবেন। মেলার এই তিনদিন সার্বক্ষণিক মাজারে দায়িত্ব পালনের কথাও বলেন তিনি।
মাজার মেলায় আসা জেলার রামপাল উপজেলার সালাম শেখ বলেন, খানজাহানের মেলা উপলক্ষে আমরা পরিবারসহ এসেছি। পরিবারের সকলকে নিয়ে এখানে স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে পারছি তাই ভালো লাগছে। আমাদের মানতও ছিল, তা পরিশোধ করেছি।
যশোর থেকে আসা সালমা খাতুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী খান জাহানের মেলা দেখার জন্য প্রতি বছর আমি এ মেলাতে আসি। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের কাছে এ মেলা খুবই জনপ্রিয়। গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য মেলাটি হয়নি তাই এবছর মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ির কাছে প্রতি বছর এ মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শানার্থীরা আসেন। এবছর মেলা শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকেই দর্শনার্থীরা আসা শুরু করেছে। মেলার প্রথম দিনে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটেছে মেলায়।
সনাতন ধর্মালম্বী সীতারানী সাহা বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে আমি মেলায় আসি। প্রতিবছরই রোগ-বালাই ও বিপদ আপদ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের মানত থাকে। এবারও মানত ছিল, এসে পরিশোধ করেছি।
মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর ধরে খানজাহান (রহ.) এর মাজের প্রতিবছর মেলা হয়। চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই মেলা বসে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এবার মেলা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মেলায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি যাতে দর্শনার্থীরা এখানে শান্তিতে মেলা উদযাপন করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, পূর্ব পুরুষদের কাছে যতদূর শুনেছি, সাড়ে ৫শ বছর ধরে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলা খানজাহানের মৃত্যু বা জন্মদিনে হয় না। এখানে চৈত্র মাসের পূর্নিমা তিথিতে ভক্তরা এসে জড়ো হত। যেটা পরবর্তীতে মেলায় রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ আসে এই মেলায়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন