২৪ জুন, ২০২২ ১৯:২৩

জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে আরও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে আরও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) নতুন নির্মিত চারশত মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (ইস্ট) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত সোমবার সকাল থেকে সিম্পল সাইকেলে (আংশিক শক্তি) পরীক্ষামূলক উৎপাদনের চেষ্টা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। প্রথম ২/১ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলেও পর্যায়ক্রমে তা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিটটি (সিম্পল সাইকেলে নির্ধারিত) পুরোপুরি চালু করা হলে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে নতুন এই ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন থেকে অতিরিক্ত ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে।

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ইউনিটটি কম্বাইন্ড সাইকেলে (পূর্ণ শক্তিতে) চালু হলে ৪০০ থেকে ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। এদিকে এই (ইস্ট) ইউনিট চালু হওয়ায়
জাতীয় গ্রিডে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড দৈনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আশুগঞ্জকে ‘পাওয়ার হাব’ ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল (নর্থ ও সাউথ) প্লান্ট দুটি, ২২৫ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্ট ও ২০০ মেগাওয়াটের মডিউলার প্লান্ট ইউনিট নির্মিত এবং চালু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অধিক পুরনো দুটি কম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (প্রতিটি ৬৪ মেগাওয়াটের ইউনিট জিটি-১ জিটি-২ ও এসটি ইউনিটটি) অপসারণ করে একই প্রায় সমপরিমাণ জ্বালানি (গ্যাস) ব্যবহার করে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল (ইস্ট) প্লান্ট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় কর্তৃপক্ষ।

এপিএসসিএল সূত্র আরও জানায়, ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (একনেক) সভায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল (ইস্ট) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। দরপত্র প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালে ২০ মার্চ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন এবং চায়না ন্যাশনাল কর্পোরেশন ফর অভারসিস ইকোনোমিক্স কো-অপারেশন কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ১৮০.৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অর্থের মধ্যে এডিবি ১০৭.৯২ মিলিয়ন, আইডিবি ৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকার প্রদান করার কথা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চুক্তি স্বাক্ষর করলেও তারা একই বছরে ১৬ জুলাই থেকে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে।

চুক্তি মোতাবেক প্রকল্পটি ডিসেম্বর/২০২০ এ সিম্পল সাইকেলে (আংশিক) ও জুন/২০২১ কম্বাইন্ড সাইকেল (পুরোপুরি) ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল। কিন্ত প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দেশ চীন ও পরে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ও মহামারি আকার ধারণ করায় এ প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। তাছাড়া চুক্তি মোতাবেক প্রকল্পের গ্যাস টারবাইন ও স্টিম টারবাইন জার্মানের সিমেন্স কোম্পানি কিছু যন্ত্রপাতি চীন থেকে আসার কথা থাকলেও আর্ন্তজাতিক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তা বাধাগ্রস্ত হয়। করোনার প্রকোপ কমে গেলে জার্মান থেকে জেনারেটর ও কারিগরি টিম আসলে, তা পুনরায় কাজ শুরু করা হলেও জেনারেটরের একটি অংশে ত্রুটি দেখায় পুনর্নির্ধারিত সময়েও উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরে জেনারেটর সরবরাহকারী দেশ জার্মানের কারিগরি টিমের সার্বিক তত্ত্বাবাধনে উদ্ভুত সমস্যা সমাধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত সোমবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।

আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, নতুন ইউনিটটি বর্তমানে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ইউনিট কম্বাইন্ড সাইকেলে (পুরোদমে) চালু করা সম্ভব হবে। ইউনিটটি পুরোপুরি চালু হলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৪০০ থেকে ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। পাশাপাশি পুরোনো দুটি ইউনিট বন্ধ করা হলে অনেক জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এই ইউনিট পুরোপুরি চালু হলে আশুগঞ্জ থেকে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর