টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে লড়াই হবে গুরু-শিষ্যের। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচনী মাঠে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে তাঁরই হাতে গড়া রাজনৈতিক ‘শিষ্য’ কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা মনে করছেন এ যেন গুরু শিষ্যের লড়াই।
এ আসনে ভোটের মাঠে আরও আছেন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাজাহান সিরাজের মেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা, জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, জাতীয় পার্টির সাদেক সিদ্দিকী, জাকের পার্টির মোন্তাজ আলী, তৃণমূল বিএনপির শহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শুকুর মামুদ।
সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব পান। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এরপর নানা ঘটনায় আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হন তিনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে টানা সাত দিন অবস্থান ধর্মঘট করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এ ঘটনার পর থেকে কালিহাতীর রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে লতিফ সিদ্দিকী আড়ালবাস ভেঙে জনসমক্ষে এসেছেন। হারানো জায়গা ফিরে পেতে নির্বাচনের মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন।
ট্রাক প্রতীক নিয়ে এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত করা। ভোটারদের কেন্দ্রে নির্বিঘ্ন যাতায়াত ও নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে। জাল-জালিয়াতি, অর্থের প্রলোভন কিংবা পেশিশক্তির বাহাদুরি নয়। ভোটাররা নির্বঘ্নে ও স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ, সভা, মতবিনিময় ও উঠান বৈঠক করছেন।
মোজহারুল ইসলাম বলেন, ‘কালিহাতীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। এমন কাউকে মানুষ নিশ্চয় ভোট দেবে না, যাকে সুখে-দুঃখে পাশে পাওয়া যায় না। ফলে কালিহাতীতে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। লতিফ সিদ্দিকী নৌকার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তিনি নৌকার ধারে কাছে আসতে পারবেন না। কালিহাতীর মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। আমি বিজয়ী হলে কালিহাতীকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করব। কালিহাতীকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।’
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৩২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঠান্ডু। এছাড়া তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৮৯২ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল