টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও কহুয়া নদীর ১২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবার রয়েছে পানিবন্দি।
চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে অতিমাত্রায় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মঙ্গলবার ভোর রাতে মুহুরীও কহুয়া নদীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর ১২টি ভাঙা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে মুহূর্তেই পানি প্রবেশ করে মানুষের ঘরবাড়িতে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসে একবার ও আগস্ট মাসে দুইবারসহ ফুলগাজী ও পরশুরাম তিনবার বন্যায় হয়েছে। এতে এই এলাকায় বসবাসকারীরা পড়েছে মহাবিপদে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্যখাতে। ধ্বংস হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট বিজতলা ও সবজি বাগান। দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীরা।
তারা জানান, গেল দুই বারের চেয়ে এবারের বন্যার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক তিনটার দিকে মানুষের বাড়ি ঘরে পানি উঠা শুরু করে। অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তাদের বাড়ির ঘরে পানি। রান্না ঘরে পানি থাকায় তারা চুলা জ্বালাতে পারছে না। অনেকেই ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে খাটের উপরে খাট রেখে কোন রকম জীবনযাপন করছেন। দুই উপজেলার প্রায় ৫০টা গ্রামের সাড়ে ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে বলে জানা যায়। বর্তমানে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফিরোজা বেগম (৫২) জানান, গেল দুই বারের বন্যায় তার ঘরের সব মাটি স্রোতে নিয়ে যায়। বারবার বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমি মাটি কোথায় পাবো? আমি কোথায় থাকবো? আবু আহম্মদ (৬৫) নামে একজন জানান, গতরাতে পানি তেমন বাড়েনি, কিন্তু মঙ্গলবার সকাল হওয়ার সাথে সাথে যে পরিমাণ পানি বাড়ছে তা আগে কখনো দেখনি। তিনি আরো বলেন, অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে এবারের বন্যার পানি। সকাল থেকে শুধু সবাই বিস্কুট মুড়ি খেয়ে আছেন, ঘরের ভিতরে পানি হাঁটুর উপরে। আর পার্শ্ববর্তী অনেকের ঘরে পানি রয়েছে কোমর পরিমাণ।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, উপজেলার আওতাধীন মুহুরী নদীর ১২ টি স্থান দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে সব কয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার পৌরসভার ৩০ টি গ্রামের ৯ হাজার ২০০ পরিবার পানি বন্দি রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয় ভূঁইয়া জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে, ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল