পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার এক নিভৃত পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে একটি রাস্তাবিহীন সেতু। দু’পাশে ফসলি জমি। মাঝখানে ছোট্ট একটি ক্যানেল। এই সেতুর ২০ থেকে ৩০ ফিট দূরে একটি সরু রাস্তা। এই রাস্তা দিয়েই এলাকার মানুষজন কৃষিসহ নানা কাজে চলাফেরা করে। রাস্তাবিহীন এই সেতু নির্মাণে খরচ হবে ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২ টাকা। স্থানীয়রা বলছেন ঠিক কী কারণে, এই সেতু নির্মিত হচ্ছে, তা তারা জানেন না।
উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের উত্তরে কবরস্থান সংলগ্ন হাকিমপুর-দগরবাড়ী থেকে বয়ে আসা একটি ক্যানেলের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে এই সেতু। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সেতুটি যে উচ্চতায় নির্মাণ করা হচ্ছে, এতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি হবে। কেননা সেতুটির একপাশে কিছুটা দূরে অনেকাংশ নিচে চলাচলের সরু রাস্তা থাকলেও অপরপাশে চলাচলের ব্যবস্থা নেই। সেতুর অ্যাবাটমেন্টের ঠিক নিচেই রয়েছে আবাদি জমি। অনেকেই বলছেন বর্ষায় কৃষকদের যাতায়াতের জন্য ছোটো খাটো কালভার্টের ব্যবস্থা করলেই চলতো। এই সেতুর সঙ্গে কোনো সড়কের সংযোগ নেই, অহেতুক সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। সেতুর দুইপাশে সড়কের বদলে রয়েছে আবাদি জমি। ফলে সড়কবিহীন এ সেতু নির্মাণের পর সড়কের ব্যবস্থা না করা হলে কোনো কাজেই আসবে না।
মন্ডলপাড়া গ্রামের আল আমিন বলেন, এত বড় সেতুর প্রয়োজন ছিল না। এখানে চলাচলের কোনো রাস্তার ব্যবস্থা নেই। এখানে যদি একটি রাস্তা নির্মিত হয়, তাহলে সেতুটি কাজে আসবে। আবার ব্যক্তিগত জমিতে কেউ রাস্তা বানাতে কেউ দিবেন কিনা, এটাও দেখার ব্যাপার। রাস্তা নির্মাণ না করা হলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হবে। সেতুটি প্রায় ৩ মাস ধরে এই অবস্থায় পড়ে আছে।
কৃষক ওমর ফারুক বলেন, ক্যানেলের ওপর দিয়ে যাতায়াত করার জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেতুর দু’পাশে সংযোগ সড়ক তো নির্মাণ করা হয়নি। তাহলে এভাবে সরকারি অর্থ অপচয় করার কী প্রয়োজন ছিলো। রাস্তা নির্মাণ না করা হলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম শাহ বলেন, এটি গত অর্থ-বছরের বরাদ্দ। তখন আমি এখানকার দায়িত্বে ছিলাম না। আমি দায়িত্বে থাকলে সড়ক ছাড়াই এই সেতু নির্মাণ করতে দিতাম না। তবে সেতুর ক্যানেলের ধার দিয়ে রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। সরেজমিন গিয়ে সেতুটি দেখার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই