দেশের অন্যান্য অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অতি বৃষ্টির ফলে ফেনীসহ দক্ষিণের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হয়েছে। উপকূলে অতিভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। এই অবস্থায় ব্যতিক্রম ঘটেছে উত্তরের রংপুর অঞ্চল। মাঝে মধ্যে আকাশে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও বৃষ্টির দেখা নেই এই অঞ্চলে।
অথচ গত বছরের জুলাই মাসের প্রথমেই ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তাসহ উত্তরের ১২ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়েছিল। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল রংপুর অঞ্চলে। এবার তার ছিটে ফোঁটাও নেই। ফলে ফসলসহ জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩ মিলিমিটার। তাই অনেকেই এখন একটু স্থবির বৃষ্টির জন্য চাতকপাখির মত আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছেন। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে সাগরের লঘুচাপ দেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে না এসে ভারতের আসামের দিকে যাওয়ায় এই অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা মিলছে না।
জানাগেছে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে রংপুর অঞ্চলের মানুষ কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা পাচ্ছে না চলতি বর্ষা মৌসুমে। ফলে খরার ঝুঁকিতে পড়েছে এই অঞ্চল। স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত অনেক কম হওয়ায় ফসলের চাষাবাদ ও জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আমনসহ অন্যান্য ফসল এখন পুরোপুরি সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে। অনেকস্থানে ক্ষেতে রুক্ষভাব সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে রংপুরে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ৩ মিলিমিটার। ৫ ও ৬ জুলাই এইটুকু বৃষ্টি হয়েছে। যা মাটিও ভেজেনি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। খরতাপে বুধবার সারাদিন মাঝে মধ্যে মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ালেও বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতির এই রুক্ষ ভাবের জন্য জনজীবনের অস্বস্তি এনে দিয়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে সর্দি জ্বসহ নানান রোগের প্রদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এদিকে কাউনিয়া উপজেলার কৃষক তাজিদুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে আমন আবাদের মৌসুম চলছে। অনেক স্থানে বীজতলার কাজ শেষ হয়েছে। চারা রোপণ করা হচ্ছে অনেকে জায়গায়। এই অবস্থায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকদের সেচ দিয়ে জমির ফসল ফলাতে হবে। এতে কৃষকদের বাড়তি খরচ হবে। আমন ধান এক সময় প্রকৃতির নির্ভর হলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের সেচ দিয়ে জমির আবাদ রক্ষা করতে হচ্ছে।
অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৫ জুলাই বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো প্লাবিত হয়েছিল। জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই। সে সময় এক সপ্তাহে গঙ্গাচড়া উপজেলায় কমপক্ষে ৪০টি বসতভিটা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর ১২টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এবার তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে সহসা বন্যার শঙ্কা নেই এই অঞ্চলে।
রংপুর অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ মাসে স্বভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল