বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা থেকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্দলীয় রূপে পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
সভায় বলা হয়, একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলসহ ক্ষমতাসীন সরকারে থাকা যেকোনো রাজনৈতিক দলের পরামর্শক, পৃষ্ঠপোষক ও দলীয় পরিচয়ে পরিচিত ব্যক্তিদের পদত্যাগ করার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভা থেকে জাতীয় নির্বাচনে সিপিবি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটসহ বামপন্থী, গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সভায় এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাজ ও জোরদার রাজনৈতিক তৎপরতা পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ‘জনতার সনদ’ প্রণয়ন ও সেই অঙ্গীকার নিয়ে সিপিবি-সমর্থিত প্রার্থীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন রাজনৈতিক রিপোর্ট উত্থাপন করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের আলোচনার মধ্য দিয়ে রিপোর্ট গৃহীত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রফিকুজ্জামান লায়েক, এস এ রশীদ, রাগীব আহসান মুন্না, জলি তালুকদার, মো. আমিনুল ফরিদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মিহির ঘোষ, শাহীন রহমান, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, পরেশ কর, অধ্যাপক এমএম আকাশ, মৃণাল চৌধুরী, ডা. দিবালোক সিংহ, অ্যাড. এমদাদুল হক মিল্লাত প্রমুখ।
গৃহীত রিপোর্টে বলা হয়, সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী ২৩ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এবং তা প্রতিফলিত হয়েছে ১০ এপ্রিল ১৯৭১-এ গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে। সংবিধানের প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বহু বিষয়ে সংস্কারের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু দার্শনিক ভিত্তি সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো যে সকল বিষয়ে সর্বসম্মত হতে পারেনি, সে সকল বিষয়ে গণভোট কিংবা সাংবিধানিক আদেশ জারির কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
সভায় আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক তিনটি টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে ইজারা প্রদান এবং সাম্রাজ্যবাদী ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তির প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত করার সকল অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই পরিচালনা করা হবে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভা থেকে কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র সাম্প্রদায়িক ডানপন্থী গোষ্ঠীর আস্ফালন রুখতে, গণমানুষের ঐক্য ও সংগ্রামের ভিত্তিতে বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গঠনের আহ্বান নিয়ে আগামী ১৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় ‘জাতীয় সমাবেশ’ সফল করার জন্য দেশবাসীর আহ্বান জানানো হয়।
রাজনৈতিক শক্তির বাইরে নিপীড়িত-নির্যাতিত সামাজিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করা ও তাদের রাজনৈতিক সংগ্রামে শামিল করার উদ্যোগ হিসেবে আগামী ৩১ অক্টোবর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশন, ২৮ নভেম্বর গ্রাম ও শহরের শ্রমজীবী মানুষের রাজনৈতিক কনভেনশন, ৫ ডিসেম্বর নারীসমাজের রাজনৈতিক কনভেনশন এবং ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/কেএইচটি