ঢাকাই চলচ্চিত্রের বরপুত্র-খ্যাত নায়ক সালমান শাহের জন্মদিন আজ। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের বছর ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই ক্ষণজন্মা নায়ক জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় তিন বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই নায়ক। যার মধ্যে প্রায় সবই ব্যবসাসফল। তার হিট ছবির তালিকায় অন্যতম একটি হলো প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। তুমুল জনপ্রিয় এই ছবিটি মুক্তি পায় সালমানের মৃত্যুর পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। নির্মাতার বলা জনপ্রিয় এই ছবিটির নির্মাণ নেপথ্যের কিছু ঘটনা হলো- নির্মাতার কথায়, “প্রথম দিনের শুটিং। এফডিসির ১ নম্বর ফ্লোরে কারাগারের সেট ফেলেছি। যেখানে সালমানের সেই সুপারহিট গান ‘চিঠি এলো জেল খানাতে’ এর দৃশ্যায়ন হয়। মা শাবানার সঙ্গে সালমানের ফাঁসির আগে শেষ বিদায় নেওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্যের শুটিং হবে। মা শাবানা তাঁর ফাঁসির ছেলে সালমানকে দেখতে কারাগারে আসে আর ছেলে তখন মায়ের পা ধরে কেঁদে বলছে, মা তুমি আমাকে একটু আদর করো, মা একটু আদর করো। আমি ক্যামেরাম্যান শহীদুল্লাহ দুলালকে (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী) বললাম চলো শুটিং শুরু করি। দুলাল তো অবাক, বলল আর্টিস্ট তো এখনো আসেনি, কার শুটিং করবেন? আমি বললাম কয়েদিদের শট নেব। সালমানের গান শুনে কয়েদিরা কাঁদছে। মার সঙ্গে ছেলের সংলাপ চলাকালীন কয়েদিদের রিঅ্যাকশন শট। দুলাল বিরক্ত হয়ে বলল, একটা নতুন ছবির শুটিং করবেন শাবানা, সালমান, আলমগীর, রাজীব, মিশা সওদাগর, শাহনাজ। সব বড় বড় শিল্পী আপনার ছবিতে, আপনি কয়েদি দিয়ে ছবির শট ওপেন করবেন কেন? আপনি বসেন, চা খান, শাবানা এখনই এসে পড়বেন তার সুন্দর মুখের ক্লোজআপ দিয়ে ক্যামেরা ওপেন করব। সবাই দুলালকে সাপোর্ট দিল। আমি বললাম না, কয়েদির শট দিয়ে ওপেন করব। শাবানা, সালমান এসে পড়লে তখন ওদের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হব। লাইট জ্বলল, ক্যামেরা বসানো হলো। কয়েদিরা শট দেওয়ার জন্য রেডি হলো। অ্যাকশন বলব এমন সময় সহকারী এসে বলল শাবানা ম্যাডাম এসেছেন। কথা শেষ হওয়ার আগে সেটেই মেকআপ নিয়ে এলো শাবানা। শাবানা বলল, আমি এসেছি আপনার শিডিউলের পুরো শিফটে এখানে থাকব। যখন প্রয়োজন হবে ডাকবেন। শাবানা চলে গেল মেকআপ রুমে। আমি অবাক হলাম শাবানার কথা শুনে। শাবানা ছিল টোটালি ব্যতিক্রম এক শিল্পী। তাই এত যত্ন নিয়ে সত্যের মৃত্যু নেই ছবিটা শেষ করতে পেরেছিলাম। সত্যের মৃত্যু নেই ছবিতে সালমান ও শাহনাজের রোমান্টিক গান করব- ‘নয়নের কাছে থেকো, হৃদয়ে ধরে রেখো, করো না সঙ্গীবিহীন আমায় কোনো দিন- ও মাই লাভ।’ গুলশান পার্কে গানের সেট রেডি। শিল্পীরা সব মেকআপ করে রেডি। সালমান শাহ ও শাহনাজকে সেটে ডাকা হলো। গান বাজানো হলো। গানের সঙ্গে সঙ্গে আমি, এ কিউ খোকনকে নিয়ে দুজনকে গানের কী মুদ্রা হবে সালমানকে দেখিয়ে দিলাম। এরপর সালমানের সঙ্গে মুদ্রা করে শাহনাজকে নাচের মুদ্রা দেখিয়ে দিলাম। ক্যামেরা চলল। শট ওকে হলো। এখনকার শিল্পীরা হলে এটা করত না। তখনকার শিল্পী মনেপ্রাণে মানত পরিচালক হলেন ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ।
সালমানও পরিচালকদের যথেষ্ট সম্মান করত। চার-পাঁচটা শট নেওয়ার পর কোরিওগ্রাফার খোকন এলো, দেখে বলল ওস্তাদ খুব ভালো হচ্ছে। আমি রেগে বললাম, থাক তোমার আর কথা বলতে হবে না। তুমি তোমার ওস্তাদি শুরু কর। সেই শট রেখে বাকি গান খোকনই শেষ করল। আরেকটি ঘটনা হলো- সালমানের ভালোবাসা পেতে ব্যর্থ হয়ে শাহনাজ রেললাইন দিয়ে ছুটে যাবে ট্রেনের নিচে সুইসাইড করবে। পেছনে তাকে থামাতে ডাকতে ডাকতে যাবে সালমান। ট্রেন ছুটে আসবে। দুর্ঘটনার মুহূর্তে সালমান ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহনাজকে বাঁচিয়ে বলবে আই লাভ ইউ। শাহনাজ খুশিতে জড়িয়ে ধরবে। মোটামুটি দৃশ্যটা এরকমই।
নায়ক সালমান নায়িকা শাহনাজসহ ফিল্মের ফুল ইউনিট নিয়ে চলে গেলাম খিলক্ষেত আর কাউলার মাঝামাঝি। রেললাইনে গিয়ে বসলাম। ট্রেন আসে শট নেই, ট্রেন চলে যায় বসে থাকি। আমরা রেললাইনের ওপর বসেই নাশতা করতে থাকলাম। আরাম করে খাচ্ছি। হঠাৎ বেরসিকের মতো সহকারী বলে উঠল ভাই ট্রেন আসছে। ব্যস সবাই খাওয়া ফেলে দ্রুত শট নিতে রেডি হয়ে গেল।”