কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তার কর্ম। তার নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র 'ঘেটুপুত্র কমলা' জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সর্বাধিক পুরস্কার জিতেছে। এ প্রসঙ্গে মেহের আফরোজ শাওনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- শামছুুল হক রাসেল
হুমায়ূন স্যারের 'ঘেটুপুত্র কমলা' নির্মাণসহ শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় সর্বোচ্চ আসন অর্জন করে নিয়েছে, কেমন লাগছে?
দেখুন যে কোনো প্রাপ্তি কিংবা সম্মান অবশ্যই ভালো লাগার। তাই স্বাভাবিকভাবে আজ আমি সবচেয়ে বেশি খুশি। তারপরেও মানুষের জীবনে রোদ-বৃষ্টির মতো কিছু আলো-অাঁধারি সুখ-দুঃখ থেকে যায়। পাওয়ার আনন্দের মাঝেও অনেক সময় বিষাদের ছায়া থাকে। আমার মনের অবস্থাও এখন তাই। মানে আনন্দের সঙ্গে আমার মনের গহিনে এখন দুঃখের বসবাস।
ব্যাপারটি যদি একটু খুলে বলেন।
আসলে লেখক বা নির্মাতা হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ কখনো অল্পতে তৃপ্ত হতে পারতেন না। তার চেষ্টা থাকত কাজটি কিভাবে আরও উন্নত করা যায়। এ ভাবনা অনবরত তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। তিনি স্বপ্ন দেখতেন নির্মাতা হিসেবে কিভাবে সফল হওয়া যায়। তার মৃত্যুর পর যখন জাতীয় পুরস্কারে 'ঘেটুপুত্র কমলা' চলচ্চিত্রের জন্য তাকে শ্রেষ্ঠ নির্মাতার সম্মান দেওয়া হলো তখনই তার এই সাফল্যের স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল। কিন্তু বড়ই আফসোস, নিজের এত বড় মাপের অর্জন নিজের চোখে দেখে যেতে পারলেন না।
'ঘেটুপুত্র কমলা' নির্মাণকালীন সময়ের কোনো স্মৃতি কি এখনো মনকে দোলা দেয়?
হ্যাঁ, 'ঘেটুপুত্র কমলা' নির্মাণকালীন সময়ের অনেক সুখ আর মজার স্মৃতি আমার মনে-প্রাণে এখনো জড়িয়ে আছে। একটি ঘটনার কথাই বলি, নিনিত সবেমাত্র পৃথিবীতে পা রেখেছে। সবাই বলল, ওর বয়স ৪০ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত ওকে নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। যাওয়া যাবে না 'ঘেটুপুত্র কমলা'র শুটিং স্পটে। তাই বের হলাম নিনিতের বয়স যখন ৪৩ দিন। হুমায়ূন আহমেদকে না জানিয়ে ভোর ৫টায় শুটিং স্পটের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে ৭টায় সেখানে পেঁৗছলাম। তখনও কেউ সেখানে পৌঁছেনি। প্রচণ্ড শীত। নিনিতকে কোলে নিয়ে শুটিং স্পটের সামনে পায়চারি করছি। কিছুক্ষণ পর হুমায়ূন আহমেদ ঘর থেকে বের হলেন। আমাকে দেখে তো রীতিমতো অবাক। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। আমি বললাম, তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি। উনি খুশিতে মন খুলে হেসে উঠলেন। পরম আদরে নিনিতের মাথায় হাত রাখলেন। আজ সেই ৪৩ দিন বয়সী নিনিত বড় হয়ে বাবার সবচেয়ে বড় সম্মানের জাতীয় ট্রফিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বাবার জন্যই হাত বাড়িয়ে নিল। এ এক অভাবনীয় মুহূর্ত।
সহধর্মিণী হিসেবে তার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণে কতটা পথ পাড়ি দেবেন?
তার সব অসমাপ্ত স্বপ্ন আমাকে পূরণ করতেই হবে। আমি জানি আমি পারব। কারণ পারার যত মূলমন্ত্র সব তিনি আমাকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।
সেই স্বপ্ন পূরণে রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন...
ব্যস্ততা আমার ভালোই লাগে। সামনে অনেক কাজ। সফলতার সঙ্গে শেষ করতে পারলেই আমি খুশি। প্রস্তুতি চলছে বিস্তর। আশা করি দর্শকদের ভালো কিছুই উপহার দিতে পারব।