শিরোনাম
- চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী ধর্ষণ, এবার সেই হেলপার গ্রেফতার
- বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদুল আজহার প্রভাব
- একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৭ জুন)
- পার্বতীপুরে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে তরুণের মৃত্যু
- সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
- বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
- নাসিরনগরে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
- ডাকসু নির্বাচনের ১০ রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ
- বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- ঢাবি ভর্তিতে নওগাঁ জেলা প্রশাসন কর্তৃক সহায়তা পেল দুই শিক্ষার্থী
- ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত পুতিন-এরদোয়ান
- ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৫
- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবেশবান্ধব শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
- শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি : আসিফ মাহমুদ
- ‘গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ফ্যাসিস্টের দোসরদের বয়কট করতে হবে’
- ইরানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করলো পাকিস্তান
- পোশাক শিল্পের নতুন চ্যালেঞ্জ ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ : বিজিএমইএ সভাপতি
- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার
- বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সমন্বয় কমিটি ঘোষণা
- ইসরায়েল থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে যাচ্ছে পোল্যান্ড
'কাউকে সন্দেহ করে পেটানোর অধিকার তাদের কে দিয়েছে?'
শওগাত আলী সাগর
অনলাইন ভার্সন

তসলিমা বেগম রেনুকে স্রেফ সন্দেহের বশে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ঢাকার কিছু মানুষ। ঘটনাটা ঘটেছে খোদ রাজধানী শহরে। রাজধানী এবং শহরকে আমরা ‘অগ্রসর’ বিবেচনা করে থাকি। অগ্রসর এলাকার বাসিন্দারা অগ্রসর হবেন- এটাইতো স্বাভাবিক। এই রাজধানী শহরে বসবাস করা কিছু মানুষ স্কুলে যাওয়া একজন নারীকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহ করেছেন এবং সন্দেহটাকে সত্য বিবেচনা করে নিজেরাই তার শাস্তি ঘোষণা করেছেন- এবং পিটিয়ে খুন করে সেই রায়ের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন।
একটি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অভিভাবকদের মধ্যে এই নারী, যার নাম রেনু- তাকে বাঁচাবার বা বাঁচাবার চেষ্টা করার মতো একজন্ও ছিলেন বলে কোথাও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই মানুষগুলো কারা? কাউকে সন্দেহ করার এবং সন্দেহ করে তাকে পেটানোর অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তার আগে বোধ হয় জানা দরকার, কাউকে সন্দেহ করলেই তাকে পেটানো যায়- এই মানসিকতা তাদের মধ্যে কিভাবে তৈরি হয়েছে? ঘটনাটা অজ পাড়াগায়ে ঘটলে তার একটা ভিন্নরকম ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতো। কিন্তু রাজধানীতে, দিনে-দুপুরে স্কুলে কোনো একলা নারী ছেলে বা মেয়ে ধরে নিয়ে যেতে আসতে পারে- এমন ভাবনাগুলোই বা তাদের মধ্যে তৈরি হলো কীভাবে?
কেবল যে ঢাকায়ই এই ঘটনাটা ঘটেছে তা তো নয়। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায়ই গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে এবং বিভিন্নস্থানে গণপিটুনিতে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। এই মানুষই কিন্তু অনেক বড় বড় ঘটনার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরব দর্শক হয়ে ঘটনা অবলোকন করে। বরগুনায় রিফাত হত্যার সময় কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। বিশ্বজিতকে কুপিয়ে মারার সময় দেখেছে। আরো অনেক ঘটনায় এই দৃশ্য দেখা গেছে। এই মানুষই আবার স্রেফ সন্দেহ বশত: মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। মানুষের এই স্ববিরোধী সত্তা কিভাবে তৈরি হলো?
একটি দেশের, একটি সমাজের মানুষের মানসপট তৈরি হয়, বিকশিত হয়- দেশের সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে। আমাদের সাহিত্য, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের রাজনীতি তা হলে নাগরিকদের, দেশের মানুষের কোন ধরনের মনন তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। তাদের আদৌ কোনো ভূমিকা আছে কি? আমাদের গণমাধ্যমের কোনো ভূমিকা আছে? প্রশ্নটা এই ভাবে করি- গণমানুষের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বিনির্মাণ কিংবা মনন তৈরির সক্ষমতা কি আমাদের মিডিয়ার, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দিকপালদের, আমাদের সাহিত্যের আছে?
কেউ হয়তো বলবেন- এরা মুষ্টিমেয় কিছু লোক মাত্র। সত্যিই তাই? আমার তো মনে হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা কোনো পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের মন্তব্য ঘরগুলোতে তাকান তো। দেখেন- কি অসহিষ্ণু মানুষ। তার অপছন্দের মানুষগুলোকে মেরে পেলতে চায়, কেউ কেউ কোনো নারীকে ধর্ষণ করতে চায়, কেউ কেউ আবার দল বেধে ধর্ষণের উসকানি দেয়। এই যে মন্তব্যগুলো তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিপিবদ্ধ করেন- এটাই তো তাদের মানসপট, এটাই তো তাদের অন্তরের অভিলাষ।
লিখিতভাবে তারা যে অভিলাষ প্রকাশ করতে পারে- সামনাসামনি পেলে তারা সেটির প্রয়োগ ঘটাবে না- এমনটি ভাবনার তো কোনো কারণ নাই। হিসেব করে দেখেন তো- এই সংখ্যাটা কতো? আরো বিস্ময় কি জানেন- এদের অনেকের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী আছে, ভালো চাকরি আছে, সামাজিক পরিচয় আছে। নাই শুধু মানুষের মতো একটা মন। কিংবা কে জানে, এটাই হয়তো তাদের কাছে আদর্শ মানুষের সংজ্ঞা।
বরগুনার মিন্নি কিংবা প্রিয়া সাহার ঘটনা ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বন্ধু তালিকাটা স্ক্যান করে দেখেন তো, দেখেন কতোজন গণপিটুনি দেয়ার, গণধর্ষণের মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ পাওয়া যায়!
আমাদের দেশ নিয়ে, দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে, সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের অনুভূতি কতো প্রকট! কিন্তু সেই দেশটার, সমাজের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী যে অপরাধপ্রবণ মন নিয়ে আমার আপনার সাথে মিলে মিশে চলছে তার কি কোনো খবর রাখছি আমরা। কিংবা আমি নিজেই অপরাধপ্রবণ মন নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছি কী না- তা কি কখনো ভেবে দেখেছি?
বলবার মতো তেমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য অর্জন যখন না থাকে, অহংকার করার মতো বিশ্বাসযোগ্য কোনো কিছু যখন না থাকে, তখন 'ভাবমূর্তি’র জিগির দিয়ে আমাদের সুপ্রিম্যাসির প্রকাশ ঘটাতে হয়। আর এই সবের ফাঁকফোকর দিয়ে মগজের মধ্যে প্রচণ্ড ধর্ষণ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, খুনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কিছু মানুষ বিচরণ করতে থাকে।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর