৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৬:২১

একজন রাজীব এর জীবনী (১১)

দেবী গাফফার

একজন রাজীব এর জীবনী (১১)

অভিনেতা রাজীব ও দেবী গাফ্ফার

রাজীব সাহেব এর পাশাপাশি আমাকেও যুদ্ধ করতে হয়েছে।

সংসারে নিবেদিত প্রাণ থেকেও আমার রাস্তায় কাঁটা এসেছে।
আমাকেও অপেক্ষা করতে হয়েছে দিনের পর দিন।
এই অপ্রিয় প্রসঙ্গ টানতে দ্বিধা ছিল।
আবার ভাবি, আমি তো সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
তারপরও আমি কিছু কথা এড়িয়ে গিয়েছি।
যাদের কথা এড়িয়ে গেলাম, তারা জীবিত।
আমার কলমের আঘাতে কেউ ছোট হবে, এমন কাজ আমি করতে পারি না।
আমাদের টাকা পয়সার অভাব রইলো না।
রাজীব সাহেব আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাইকে দান করতে থাকেন।
আমিও যা পারি করি।

টাকা আসা ভালো, কিন্তু অনেক সময় এই টাকাও অনর্থের মূল হয়ে জীবন এলোমেলো করে দেয়।
টাকা আসলো, আকাশ ছোঁয়া সম্মান, সাথে টাকা পিপাসু মহিলা।
আমার অদম্য জেদ আর ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, আমি জিতে গেলাম।
মহিলার মুখোশ খুলে গেল, রাজীব সাহেব বুঝতে পারলেন।
ক্ষমা চেয়ে বললেন, তুমি তো আমার হুরপরী।
তুমার জায়গা কেউ কোন দিন নিতে পারবে না।
ঐ মহিলার সাথে কাজ করলেও আর কোনদিন ফিরে তাকাননি।
উনার জীবনটাই ছিলো পরীক্ষার পর পরীক্ষা।
মহিলা চেয়েছিলেন সংসার ভেঙে উনি আসবেন।
এখানেও ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’
সবার জীবনেই এমন কিছু ঘটনা থাকে।

তখন প্রচণ্ড অভিমান হয়েছিল।
এত বছর পরে আর কষ্ট লাগে না।
ক্ষমা করে দিয়েছি।
এই লেখা যদি কোনদিন বইয়ের আকার নেয়, সেদিন বিস্তারিত লিখবো।

আমরা লালমাটিয়া থাকতেই ৯২ সালে আমাদের তৃতীয় পুত্র দীপ এর জন্ম হয়।
কত কথা কত স্মৃতি চোখে ভাসে।
আমি প্রায় দিন-ই বুয়ার বোরকা পরে বেবিট্যাক্সি নিয়ে রাজীব সাহেব এর পিছু নিতাম।
উনার পিছনে আমিও অফিসে ঢুকতাম।
যিনি আগে থেকে অফিসে রাজীব সাহেব এর অপেক্ষায় থাকতেন, আমাকে দেখে পড়ি-মরি করে দৌঁড় দিতেন।
এখনও মনে পড়লে একা একাই হাসি।
টেবিলে রাখা মার্বেল পাথরটা হাতে নিলেই আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলতেন, আচ্ছা আগে ওটা রাখো।
বলো কি খাবে, তোমার নান আর চা আনি?
আরে এসব কিছু না, খামাকা কেন যে এরা আসে।
তুমি তো আমার হুরপরী।
হুরপরী শুনলে আমার রাগ শেষ।
বাসায় চলে আসতাম।
জয় বিজয় অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে।
ওদের স্কুল, দীপের বেড়ে ওঠার সময়... কখন যে ৯৫ সাল চলে আসলো টেরই পেলাম না।
আট হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া।
ভাড়া বাড়িতে আর কত?
এবার একটা নিজের বাড়ি হোক।
লালমাটিয়া বাড়ি কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই।
বললেন উত্তরা বাড়ি দেখ।
সকালে জয় বিজয়কে স্কুলে দিয়ে, বেবিট্যাক্সি নিয়ে উত্তরার অলি-গলিতে সারাদিন বাড়ি খুঁজি।
উত্তরা এক নম্বর সেক্টরে দু’তলা বাড়ি পেয়ে যাই।
৪৪ লক্ষ টাকা দাম।
আমার কাছে যা ছিলো রাজীব সাহেবের যা ছিল- দু’জনে মিলে স্বপ্নের বাড়ি কিনি।
রাজীব সাহেব একদিনই বাড়ি দেখেছিলেন।
আমরা লালমাটিয়া থেকে উত্তরা চলে আসি।
কে জানতো এখানেই আমার জন্য দুঃখরা লাইন বেঁধে অপেক্ষা করছে।
‘চলবে...’

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর