মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের শৌখিন পেশা ইয়াবা পাচার

মাঝিদের মাধ্যমে করা হয় প্রলুব্ধ, ক্যাম্পেই বডি ফিটিং

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গাদের শৌখিন পেশা ইয়াবা পাচার

কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা পাচারে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা পাওয়ায় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা ইয়াবা পাচারে ঝুঁকছে দিন দিন। অনেকে এবার এটিকে শৌখিন পেশা হিসেবেও নিচ্ছে। দারিদ্র্যের সুযোগে শরণার্থী ক্যাম্পের মাঝিদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচারে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। মাদক ডনদের ফাঁদে পা দেওয়ার পর ক্যাম্পেই করা হচ্ছে ইয়াবার বডি ফিটিং। এরপর নিত্যনতুন কৌশলে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইয়াবার চালান। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের দিয়ে ইয়াবার চালান বহন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বেশ কিছু চালান আটক করা হয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা ইয়াবাসহ একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছে। গ্রেফতার-পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাচ্ছে, দারিদ্র্যের সুযোগে অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদের ইয়াবা পাচারের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা চট্টগ্রাম কারাগারে আসেন, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। গত দুই মাসে গাণিতিক হারে বেড়েছে রোহিঙ্গা হাজতির সংখ্যা।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবা চক্রের হোতারা বর্তমানে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বহনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে। রোহিঙ্গারা ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার পর চালানের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সম্পর্কে খুব একটা তথ্য দিতে পারে না। ফলে বাহক গ্রেফতার হলেও হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই রোহিঙ্গাদের দিয়ে ইয়াবা পাচার বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। গ্রেফতার রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, শরণার্থী ক্যাম্পের মাঝিদের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের মোটা অঙ্কের প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াবা পাচারকাজে প্রলুব্ধ করা হয়। মাদক পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ার পর তাদের ক্যাম্পেই ইয়াবার চালানের ‘বডি ফিটিং’ করা হয়। এরপর তাদের ইয়াবার চালান দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। অধিকাংশ চালান পাচারের জন্য বহুল প্রচলিত ‘ফিশিং’ পদ্ধতি অনুসরণ করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কিছু চালান আটক হলেও অধিকাংশ চালানই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইয়াবা চালান পরিবহনের জন্য ক্যাম্পের মাঝি ও চালানের বাহক ভিন্ন ভিন্ন হারে টাকা পায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটা চালান বহনের জন্য পরিমাণভেদে বাহক পায় ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে নারীবাহক কিছুটা কম টাকা পায়। চট্টগ্রাম কারাগার সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে মাদক-সংশ্লিষ্ট ঘটনায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ২৮ রোহিঙ্গা আসে। এর মধ্যে চলতি মাসের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আসে ১৮ জন রোহিঙ্গা। এর আগে জুলাই মাসে মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আসে ১১ জন রোহিঙ্গা। চট্টগ্রাম মহানগর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দিয়ে ইয়াবা পাচার বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বেশ কিছু চালান আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা ইয়াবা পরিবহনকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। অনেকে ইয়াবাসহ একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর