রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

তবু হার মানতে নারাজ ট্রাম্প

দূরে সরে যাচ্ছেন কর্মকর্তা ও রিপাবলিকান নেতারা, শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তবু হার মানতে নারাজ ট্রাম্প

নির্বাচনে ভোটের হিসাবে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছেন। পরাজয়ের আভাস পেয়ে ট্রাম্পের উদ্ভট আচরণের কারণে দূরে সরে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ও রিপাবলিকান নেতারা। পাশে কেউ না থাকলেও কিছুতেই থামছেন না ট্রাম্প। কোনোভাবেই হার মেনে নিতে নারাজ তিনি। জো বাইডেনের বিজয়ের খবর প্রকাশের কয়েক মুহূর্ত পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বাইডেন মিথ্যা জয়ের ভাব ধরার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। ভোটযুদ্ধ এখনো শেষ হওয়ার অনেক বাকি।’ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনি যুদ্ধ সোমবার থেকে শুরু হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘ভোট গণনার ফলগুলো এখনো নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রত্যয়ন করেননি। যে ফল তা আসলে সংবাদমাধ্যমের পূর্বাভাস মাত্র।’

এর আগে ট্রাম্প জো বাইডেনের উদ্দেশে টুইট করে বলেন, ‘ভুল করেও প্রেসিডেন্ট পদের দাবি জানাবেন না। আমিও সেই দাবি জানাতে পারি। আইনি প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে! শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা মনে স্থান না দেওয়া প্রেসিডেন্টের এই ‘গোয়ার্তুমি’ ছাড়িয়ে তাকে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে পারবে, ট্রাম্পের আশপাশের অনেকেই এখন এমন ‘একজনের’ খোঁজ করছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’গুলোতে মার্কিন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়লেও ট্রাম্প এখনো পরাজয় মেনে নেওয়ার বক্তৃতা প্রস্তুত করেননি। কেবল তা-ই নয়, কয়েক দিন ধরে তিনি তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনাতেও নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং দুই ছেলেসহ সবচেয়ে কাছের লোকদের পরামর্শে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন। ট্রাম্প জুনিয়র ও ওই উপদেষ্টারা আদালতে ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রাসী চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অন্যান্য রিপাবলিকানকে ট্রাম্পের পক্ষ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। সিএনএন জানিয়েছে, চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডৌসসহ ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টকে বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝিয়ে উল্টো তার হাতের মুঠো থেকে নির্বাচন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রিপাবলিকান প্রার্থীর মন জুগিয়ে চলছেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সময় ভোরের আগে আগে সর্বশেষ জনসম্মুখে আসা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ের জন্য অর্থ জোগাড়ে নেমে প্রেসিডেন্টকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প ভিত্তিহীনভাবে নির্বাচনে জালিয়াতির যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে বিব্রত হচ্ছে এক পক্ষ। আর আরেকটি পক্ষ তার এমন দাবির সঙ্গে সহমত জানিয়ে পরাজয় না মেনে নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। ট্রাম্পের কী কী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে তা নিয়ে অ্যাটর্নিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার শিবিরের সিনিয়র উপদেষ্টারা। আবার আরেক পক্ষ আশা করছেন পরাজিত হলেও সে ফল মেনে নেবেন তাদের এ প্রার্থী। শুক্রবার সকালে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ট্রাম্প টেলিভিশন দেখতে দেখতে তার পক্ষে খুব বেশি মানুষকে না দেখে আরও মুষড়ে পড়েন বলে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। সেদিন বিকালে দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। ‘এটা কেবল একটি একক নির্বাচনের বিষয় নয়। এটা আমাদের সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যেন আমাদের সরকারের ওপর আস্থা পায় তা নিশ্চিত করতে আমরা এ প্রক্রিয়াকে আইনের যতগুলো দিক আছে সবগুলোর ভিতর দিয়ে নিয়ে যাব’, বলেছেন তিনি। ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন বিভিন্ন সুইং স্টেটে এগিয়ে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়াতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। তবে এপি ও ফক্স নিউজ অ্যারিজোনাতে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করলেও শুক্রবার সেখানে ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, চূড়ান্ত ফল সহসাই জানা যাবে না, কারণ ভোট গণনা এই সপ্তাহজুড়েই চলবে। তবে এখন যে পর্যন্ত ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে বাইডেনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

দূরে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ও রিপাবলিকান নেতারা : ভোটে হেরে যাওয়ার আভাস পেয়ে নির্বাচনী প্রচার শিবির ও হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা ডোনাল্ড ট্রাম্প সঙ্গ ছাড়ছেন। জো বাইডেন শুক্রবার ভোটের হিসাবে পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টপকে যাওয়ার পর ওই কর্মকর্তারা সরতে শুরু করেন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভোটের যে অবস্থা, তাতে পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের কিছু সিনিয়র কর্মকর্তা ও নির্বাচনী প্রচার শিবিরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পের আর আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছেন তার একজন উপদেষ্টা। সিএনএনকে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি ছিল এক ধরনের মিথ্যাচার। ওই ঘটনার পর হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তা তাদের বিভাগীয় প্রধানদের কাছে ট্রাম্পের পরবর্তী করণীয় নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের পরবর্তী করণীয় কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটা ঈশ্বর ভালো জানেন।’ ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের পরামর্শক ম্যাট মরগান বলেছেন, এই নির্বাচন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, চার রাজ্যের ফলের ভিত্তিতে জো বাইডেনের জয়ের যে ভুয়া আভাস দেওয়া হচ্ছে তা বাস্তবতা থেকে বহু দূরে।

নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব- ট্রাম্পের আইনজীবী : ট্রাম্প শিবিরের এক আইনজীবী বলেছেন, নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই করতে চাই। মূলত ট্রাম্পকে বিভিন্ন রাজ্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির পক্ষ থেকে আইনজীবীদের চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক আইনজীবী এ কথা বলেছেন। আইনজীবী প্যানেলের সদস্যরা বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্যে ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনে অনিয়মের বিভিন্ন প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে অনিয়ম নিয়ে বহু অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ট্রাম্প নিজেও অভিযোগ করেছেন। সেসব ব্যাপারে শক্ত প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন আইনজীবীরা।

আরেকটি সূত্র জানায়, মামলা করার জন্য নির্দিষ্ট প্রমাণ দরকার। তবে নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না। সে কারণে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ নিয়ে আদালতে গিয়ে নিজেদের সম্মান হারাতে চান না আইনজীবীরা। অন্তত দুটি রাজ্যে আইনজীবীদের বিশ্বাস রয়েছে, ভোটে কারচুপি হয়েছে।

সে কারণে মামলা চালানোর দোরগোড়ায় রয়েছেন তারা। ট্রাম্পের একজন আইনজীবী বলেছেন, শেষ বাঁশি না বেজে যাওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর