বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ওরা নারী নয় পুরুষ

প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোহাগ আহমেদ। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে মোবাইল ফোন হার্ডওয়্যার অ্যান্ড সফটওয়্যার ফিক্সিংয়ের কাজ খুব ভালোভাবে রপ্ত করেন তিনি। নারী কণ্ঠে কথা বলার দক্ষতা তার আগে থেকেই ছিল। এ দুই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন সোহাগ। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভ তাকে পেয়ে বসে। এ প্রতারণায় টার্গেট হিসেবে তিনি বেছে নেন অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম ইমো ব্যবহারকারী মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের। নারী কণ্ঠে প্রবাসীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে সোহাগ হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। সোহাগসহ এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। ডিবি বলছে, সোমবার নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই চক্রের মূলহোতা সোহাগসহ অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। অন্যরা হলেন- মো. রিপন ইসলাম, সোহেল রানা ও লিটন আলী। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা ইমোতে সুন্দর চেহারার ছবি সংবলিত নারী আইডি থেকে মেসেজ দিত মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী প্রবাসীদের। এরপর শুরু কথোপকথন ও ছবি আদান-প্রদান। সুন্দর ছবি ও শ্রুতিমধুর কণ্ঠের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় সহজেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন প্রবাসীরা। পরে ভিডিও কলের প্রলোভনে কৌশলে প্রবাসীদের ইমো আইডি নেওয়া হতো নিয়ন্ত্রণে। পরে ইমো নম্বর পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্টের প্রিভিয়াস হিস্টোরিতে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের নম্বর সংগ্রহ করে নানা বাহানায় হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা। অথচ ওই ইমো আইডিই ভুয়া। মেয়ে কণ্ঠে কথা বলতেন প্রতারক চক্রের পুরুষ সদস্য। সোহাগ প্রতারণায় সহযোগী হিসেবে প্রথমে তার আপন ভাই রিপনকে বেছে নেন। রিপন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা ক্যাশ-আউট করত। এ চক্রে সোহেল ও লিটন সহযোগী হিসেবে কাজ করত। চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে জায়গা-জমি ও বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়ে আলিশান জীবনযাপন করত। ডিবির ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, চক্রটির খপ্পরে পড়েন ইরাক প্রবাসী মো. সামছুল হক। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর সামছুল হকের বোন ঢাকার হাজারীবাগের বাসিন্দা সুরাইয়া আক্তারের কাছে একটি ভয়েস ম্যাসেজ আসে। ভয়েস ম্যাসেজটি হুবহু সামছুল হকের কণ্ঠের মতো ছিল। ভয়েস ম্যাসেজে বলা হয়, সামছুল হক অসুস্থ। তিনি ইরাকের এক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার চিকিৎসার জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠাতে হবে। ভয়েস ম্যাসেজটি শোনার পর সুরাইয়া দ্রুত তার মা শামসুন্নাহারকে বিষয়টি জানায়।

পরে ছেলের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ভয়েস ম্যাসেজে দেওয়া নম্বরে বিকাশ ও নগদে ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পাঠান মা। এর দুই দিন পর ছেলের সঙ্গে কথা বলে মা জানতে পারেন, সামছুল হকের ইমো আইডি হ্যাক হয়েছে। আর তিনি অসুস্থও নন, এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন না। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় ডিএমপির হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করেন প্রবাসী সামছুল হকের মা শামসুন্নাহার। ওই মামলায় তদন্তে গ্রেফতারকৃতদের নাম উঠে আসে। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, প্রতারকরা ভিকটিমের নম্বর দিয়ে তাদের ডিভাইসে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করত। এতে ভিকটিমের কাছে যাওয়া ওটিপি নম্বর বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে নিতেন তারা। ওটিপি পাওয়ার পর তারা প্রবাসীর ইমো অ্যাকাউন্টটি আয়ত্তে নিয়ে প্রথমে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতেন। পরে ইমো-বেটা ব্যবহার করে প্রবাসীর অ্যাকাউন্টের নম্বর পরিবর্তন করত। গ্রেফতার চারজনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাটোরের লালপুর থানার বিলমারীয়া ও রাজশাহীর বাঘা থানার দুড়দুড়িয়া গ্রামের অর্ধেকের বেশি মানুষ এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এ চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর