সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এ বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে বাহিনীর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। র‌্যাব সদস্যদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে (নিষেধাজ্ঞা) আমি বলব, এ ক্ষেত্রে কারও মনোকষ্ট পাওয়া উচিত নয়। কিছুদিন আগে একটি দেশ র‌্যাবের ওপর একটি স্যাংশন দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ এটি আমাদের দেশ। আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে, তারা কে কী করে না করে, তা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই, প্রথমে বোধ হয় সবার একটু মনটা খারাপ ছিল। এখন সেই চিন্তা আর নেই। আমি এটা বলতে পারি, যারা এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কেন কোন উদ্দেশ্যে করছে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ভালো-মন্দের বিচার বাংলাদেশ সরকার করতে পারে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমি সরকারে আছি, আমি একটা কথা বলতে পারি, কে ভালো করল, কে মন্দ করল, সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না, কিন্তু বাংলাদেশ করে। যে কোনো অপরাধের কিন্তু বিচার হয়। সবাইকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলব। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। বিরোধী কিছু শক্তি বিদেশে দেশের বদনাম করছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা জানি, দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা বাংলাদেশ যত ভালো কাজই করুক না কেন, তারা কিছুই চোখে দেখে না। আরেকটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে গিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করা।  তিনি বলেন, এ বদনাম করে বোধ হয় তারা কিছু সুবিধা পায়। কিছু আর্থিক সুবিধাও পায় বা অন্যান্য সুবিধা কিছু পায় তারা। আমাদের যারা (যেসব প্রতিষ্ঠান) খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে, সফলতার সঙ্গে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে তারা বদনাম করে বেড়ায়। বাংলাদেশের কোনো উন্নতি তো তাদের চোখেই পড়ে না। র‌্যাব আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকের কাছে এলিট ফোর্স র‌্যাব আজকে শান্তি, নিরাপত্তা, আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু লোক তো থাকবেই সবসময় বিরোধিতা করার। আর মাঝে-মধ্যে কিছু উল্টাপাল্টা কথাও বলবে, সেগুলো কানে না নিয়ে, নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে আমরা আমাদের দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কি না, সঠিক পথে আছি কি না এ চিন্তাটা নিজেই করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে যাই, অবশ্যই বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ কখনো কোনো দেশের উন্নতি করতে পারে না। কাজেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি এইটুকু বলব, জঙ্গি দমনে র‌্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্যসহিষ্ণু নীতি ঘোষণা দিই। কারণ, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে দেশটাকে জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। মাদকের প্রভাব বাড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছি, উন্নত হচ্ছি, পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, মাদকের প্রভাব অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে অনেকেই। এটা ধনিক শ্রেণি থেকে নিম্ন শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত।

মাদক নির্মূলে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, একটা পরিবারে যদি মাদকাসক্ত কেউ থাকে, সেই পরিবারে কষ্টের সীমা থাকে না। এমনও দেখা গেছে, মাদকাসক্ত সন্তান বাবা-মাকে পর্যন্ত হত্যা করে। এক্ষেত্রে মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান র‌্যাব চালাচ্ছে, তা একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ কারণে আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।

রমজানে যেন মানুষের কষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের একটা অদ্ভুত বিষয় হলো, রমজান মাস এলেই যেন কিছু মানুষের মুনাফা করার একটা অভিলাষ দেখা দেয়। অথচ রমজান আমাদের কৃচ্ছ্রতার মাস। সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে দেখি উল্টো কাজ আমাদের দেশে হয়। আরেকটা হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া। এক্ষেত্রে র‌্যাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, নকল প্রসাধনী তৈরি করা, নকল খাবার তৈরি করার এ বিষয়গুলোর ওপরও র‌্যাব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। জাল মুদ্রা ছাপানো, মানুষকে ধোঁকা দেওয়া- এগুলোতে জনগণের ক্ষতি হয়, দেশের ক্ষতি হয়। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। মঞ্চে অন্যদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। অনুষ্ঠানে র‌্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সর্বশেষ খবর