রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রতিবেশীর ঘরে ইফতার আছে কি না খোঁজ নিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রতিবেশীর ঘরে ইফতার আছে কি না খোঁজ নিন

হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ আছে। একটি দুনিয়ায়। অন্যটি আখেরাতে। দুনিয়ার আনন্দ হলো ইফতারের আনন্দ। আখেরাতের আনন্দ হলো দিদারে ইলাহি তথা প্রেমময় প্রভুর প্রেমদর্শনের আনন্দ।’ (বুখারি শরিফ।) সত্যি! ইফতারের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রসুল (সা.) ইফতারের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ইফতার যেমন রোজাদারের জন্য আনন্দময় ও সওয়াবে ভরপুর নেয়ামত, একইভাবে ইফতারের জন্য অপেক্ষার সময়টুকুও রোজাদারের আমলনামায় অফুরন্ত সওয়াব লেখেন ফেরেশতারা।’ (ফাজায়েলে সিয়াম।) শুধু তাই নয়, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ইফতারের সময় এতই মূল্যবান, এ সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবেন, তাই কবুল করবেন।’ (কিতাবুস সিয়াম।) সূর্যাস্তের পর দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নাত। বুখারির বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যত দিন মানুষ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ এ ক্ষেত্রে মাগরিব নামাজের আগে ইফতার করা সুন্নাত। সারা দিন ক্ষুধার্ত থেকে ইফতারের সময় খাবারের ওপর হামলে পড়তে দেখা যায় অনেকেকে। এটিও সুন্নাতবিরোধী কাজ। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও ইফতারে অতিভোজন স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। নবীজির ইফতার ছিল খুবই সাদামাটা। আসলে নবীজি বিজ্ঞানময় জীবনযাপন করতেন। তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন, দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকার পরপরই খুব বেশি খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। তাছাড়া রুহকে তাজা করার এই মাসে দেহকে বেশি খাবার দেওয়াও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বড় বাধা। তাই নবীজি পুরো রমজানজুড়েই বেশি বেশি ইবাদত করতেন কিন্তু খুব কম খাবার খেতেন। খাদেমুর রসুল আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর খেতেন। আর তাও না পেলে এক ঢোক পানি খেয়ে ইফতার করতেন।’ (সুনানে তিরমিজি।) খেজুর দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দিয়ে ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি পবিত্র।’ (সুনানে তিরমিজি।) আমরা যারা রমজানকে আত্মার পরিশুদ্ধির মাস হিসেবে নিয়েছি, আমাদেরকেও নবীজির মতো পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এই যে ইফতারে আমাদের এত বাহারি আয়োজন আর সাহারিতে রাজকীয় ভোজ- এ দুটির একটিও রোজার স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। সুফিরা বলেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো, নফসকে দুর্বল করে মানুষের কাম-ক্রোধের আগুন নিভিয়ে দেওয়া। রুহকে শক্তিশালী করা। কিন্তু কেউ যদি দিনের না খেয়ে থাকাটা রাতে খেয়ে উসুল করে নেয়, তাহলে কিন্তু এই রোজা দিয়ে না নফসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে, না তার রুহকে জাগিয়ে সুন্দর মানুষ হতে পারবে।

আরেকটি বিষয় হলো- চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও খুব সতর্ক করে বলেছেন, মানুষ যখন উপবাস ব্রত করে, তখন তার কোনোভাবেই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। ওই দিনগুলো সে রাতে অবশ্যই সীমিত খাবার খাবে। তাহলে দেহ ফিট থাকবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নতুবা তার দেহে নানান জটিলতা দেখা দেবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকর কারণে বহু মানুষের ঘরে এখন ইফতার করার মতো ন্যূনতম খাবারটুকুও নেই। এ অবস্থায় আমাদের সাধ্য মতো পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়দের খোঁজখবর নিতে হবে। যারা কাছাকাছি থাকে যেমন পাশের বাসায় বা পাশের বাড়ির প্রতিবেশী তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। আর যারা একটু দূরে আছে, তাদের কাছে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। ইফতারের আনন্দে সবাই যেন শরিফ হতে পারে সে চেষ্টা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। অন্যকে ইফতার করানোর সওয়াব সম্পর্কে নবীজি বলেন, ‘কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমান সওয়াব তাকেও দেওয়া হবে। এ জন্য কারও সওয়াব থেকে কমানো হবে না।’ এমন লোভনীয় সওয়াবের কথা শুনে সাহাবিরা খুবই খুশি হলেন। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নবীজি! আমাদের মধ্যে এমন অনেকে দরিদ্র সাহাবি আছে, যারা অন্যকে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না।’ নবীজি বললেন, ‘তুমি চাইলে তোমার ভাইকে এক ঢোক পানি কিংবা একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করিয়েও সওয়াব অর্জন করতে পারো।’

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর,

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর