শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বললেন

বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, ‘৪০ বছর আগে দেখতাম ব্রিফকেস হাতে কেউ কেউ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত, এখন তারা একেকজন ব্যাংকের মালিক। সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যারা বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকব্যবস্থা আজকে কিছু মানুষের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি ও বাজার এই দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। এই সিন্ডিকেট ধরতে এবং ভাঙতে না পারলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায়িত্বে থাকা উচিত নয়। গতকাল রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘কভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

কর্মশালাটি ইআরএফ ও এসএমই ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজন করে। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মাদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। এতে মূল প্রবন্ধে এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে ফাউন্ডেশনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সরকারের কাছে কিছু দাবিও তুলে ধরা হয় মূল আলোচনায়।

প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। কারণ বাজারের যে অবস্থা, তার পকেটে সে টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। আমাদের চিনির অভাব নাই। আমাদের চাল-ডাল, তরিতরকারির অভাব নাই।’

এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এর পরও দেশে আজ যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে, ব্যবসার নামে আজ যে লুটপাট হচ্ছে, মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে, এগুলো সাংবাদিকদের আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে, এগুলো আরও ফোকাস করতে হবে। আমরা যখন বাজারে যাই তখন দেখি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কেন ঊর্ধ্বগতি? আমাদের কিন্তু কোনো কিছুর অভাব নেই। আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল, ডাল, তরিতরকারি, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবকিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর পরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে এ অবস্থা বিরাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘অবাক লাগে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে লাখ লাখ বেকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ কিন্তু মওকুফ করা হয় না। কাদের ঋণ মওকুফ করা হচ্ছে? যারা ব্যাংক থেকে লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে খেলাপি হয়েছেন তাদেরটাই বারবার মওকুফ করা হচ্ছে। তারা মওকুফ পেয়ে আবার ঋণ নিচ্ছেন। বড় খেলাপিদের এই ঋণগুলো যদি এসএমই ফাউন্ডেশনসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের দেওয়া হতো, তবে তাদের ব্যবসা আরও সমৃদ্ধিশালী হতো। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। আমি আগেও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি, বড় খেলাপিদের ঋণ যাতে মওকুফ না করা হয়। কিন্তু বারবারই তাদের সুবিধা দেওয়া হয়। কারা ব্যাংকের মালিক হয়েছে, কীভাবে হয়েছে এগুলো আপনাদের তুলে ধরতে হবে।’

কামাল মজুমদার বলেন, ‘আমার ঢাকা শহরে রাজনীতির বয়স ৫০ বছর। আমি দেখেছি অনেকে ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরত, অনেকের কাছে টাকা ছিল না, অন্যের কাছে সিগারেট চেয়ে খেত। আজকে তারা ব্যাংকের মালিক। তারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছে। আমি মনে করি, যারা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত তাদের নামগুলো প্রকাশ করা। কেন ওনারা করেন না আমি জানি না। এটা একটা বড় প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা দেখছি, যে ব্যক্তি লুটপাট করে বড়লোক হচ্ছে তাকে আরও সুযোগ দিচ্ছি। ফলে কিছু ব্যক্তির কাছে ব্যাংক থেকে শুরু করে সারা অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই সিন্ডিকেট আমাদের ভাঙতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে আপনারা যারা সাংবাদিক রয়েছেন তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেভাবে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ধরতে না পারি, এই সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, দেশের ১৭ কোটি মানুষের যে দুঃখ-কষ্ট যদি লাঘব না করতে পারি, তবে আমার মনে হয়, আমাদের মতো লোকের মন্ত্রী থাকা উচিত নয়।’

সর্বশেষ খবর