দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদাবাজরা ছাত্রদের এ আন্দোলনের কারণে গা ঢাকা দিয়েছে। তারা যেন ফিরে আসতে এবং নতুন কোনো চাঁদাবাজ তৈরি হতে না পারে আমরা সেদিকে নজর রাখব। তবে সবাইকে একসঙ্গে ধরলে তো আপনি আমি পড়ে যাব। ফলে আমরা পর্যায়ক্রমে সবাইকে ধরব।
গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম চালু রাখা হবে। এটা বন্ধ করা যাবে না। খুব দ্রুত টিসিবির কার্যক্রম চালু করা হবে। মূল্যস্ফীতি প্রশমনে সারা দেশে ১ কোটি ফ্যামিলি ফেয়ার প্রাইস কার্ড রয়েছে সেগুলোও বহাল রাখা হবে। বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন-জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কারওয়ান বাজারেই একটা পণ্য চারবার হাতবদল হয়, তাই না? এগুলো ‘প্রিয়েমপটিভ মানি’, তুমি এত টাকায় বিক্রি করলে এত টাকা পাবে। এভাবে টাকা আদায় করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, চাঁদাবাজি হয়, একটা ট্রাক ঢাকা পর্যন্ত আসতে ৭ হাজার টাকা লাগে-কেউ একজন আমাকে বলেছিলেন। তবে এটা কিন্তু বাণিজ্য কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না। এটা যাদের দায়িত্ব, তাদের সঙ্গে কথা বলব।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অনেকে আত্মগোপনে গেছেন। নতুন করে চাঁদাবাজ তৈরি হবে না, সেই নিশ্চয়তা কী-জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে অনেক প্রতিবেদন আসছে। চাল কিনবে চাতাল থেকে, এক গ্রুপ (চাঁদা) নিয়ে চলে গেছে, আরেক গ্রুপ এসে আবার চাঁদা দাবি করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমি (দায়িত্বশীলকে) বলেছি, তাৎক্ষণিকভাবে ডেপুটি কমিশনারকে বলো খোঁজখবর নিতে, যাতে ভালো ব্যবসায়ীরা বাধাপ্রাপ্ত না হয়। আমি জানি, এক গোষ্ঠী গেলে, নতুন আরেক গোষ্ঠী আসবে।
চাঁদাবাজি কমাতে কী ব্যবস্থা নেবেন-জানতে চাইলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, চাঁদাবাজি ও একচেটিয়া ব্যবসা হলে জনগণের ভোগান্তি হয়। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এখনই সব বলব না। তবে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার সবাইকে একসঙ্গে ধরলে তো আপনি আমি পড়ে যাব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাণিজ্য সবচেয়ে বড় বিষয়, দেশের ও বিদেশের বাণিজ্য। খুব সম্ভব দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ থাকে, কোনোরকমের দুর্নীতি না হয়, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাণিজ্য ও দোকানের একটি সম্পর্ক রয়েছে, এসব বিষয় যেন দূরীভূত হয়। সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোর মধ্যে শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সমস্যাগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি যত দ্রুত পারি করব। এজন্য আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত সব সংস্থার সঙ্গে বসব। কারণ তাদের সহযোগিতা লাগবে, আপনারা নিশ্চিত থাকেন যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির সঙ্গে কতগুলো নার্ভস আছে। যেমন ব্যাংকিং খাত এবং ব্যবসাবাণিজ্য; সেটা সরকারি, বেসরকারি খাত, দেশের অভ্যন্তরে বা বিদেশে যেখানেই হোক। এটা ছাড়া অর্থনীতি চলতে পারে না। কোনো কর্মসংস্থান হতে পারে না। মানুষের আয়ের সংস্থান হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টর বড় রোল প্লে করবে। এটা হচ্ছে নির্দেশনা। তিনি বলেন, দ্বিতীয় হচ্ছে মূল্যস্ফীতিতে নজর দিতে হবে। এর সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি করতে হবে। এর বাইরে যদি কিছু করতে হয়, যেমন মজুত করা, সে বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে হলে বলব। এ ছাড়া আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেসব বিষয় পেন্ডিং রয়েছে সেগুলো দ্রুত করব। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্য প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমরা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আমদানির যে মূল্যস্ফীতি সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। যতটুকু সম্ভব আমাদের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি করতে হবে। যাতে বাজার, ভোক্তা ও সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে। আর এখন যে চাপটা রয়েছে সেটাও যাতে কমে আসে সেই চেষ্টা থাকবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু এক দিনে প্রত্যাশা করলে তো চলবে না। হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ করে দিলে নিষ্পাপ লোকজন ভুক্তভোগী হবেন। এর আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিশন গিন্টিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। সে সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও এডিবির যতগুলো প্রকল্প আছে সেগুলোর মধ্যে যৌক্তিক যেগুলো আছে, সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করিনি। তারা বলেছে আপনারা যদি বলেন তাহলে কার্যক্রম চালিয়ে যাব। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পাইপলাইনে যে প্রকল্পগুলো আছে, সেসব বিষয়ে আমরা সহায়তা করব যদি আপনারা চান। তারা খুব পজিটিভ। এডিবি ও বিশ্বব্যাংক আমাদের সহায়তা করবে। রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রিজার্ভ নিয়ে কথা বলার জন্য গভর্নর আছেন। আমরা বেশি গভীরে যাইনি। তারা এবং আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবেন। আমরা অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করব।