বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের ঘটনায় রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরই গতকাল দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়েছে ভারত সরকার। এদিন দুপুরে দিল্লির সাউথ ব্লকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে যান নুরুল ইসলাম। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ডেস্কের দায়িত্বে নিযুক্ত যুগ্ম সচিব বি শ্যাম তাকে ডেকে পাঠান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে কোনো সমাধান হয়নি। বিষয়টি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য বিজিবি-বিএসএফ ডিজি স্তরের দ্বিবার্ষিক বৈঠকে আলোচনা হবে।
নুরুল ইসলামের সঙ্গে এ সময় বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) আলমগীর হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। বি শ্যাম বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে বিজিবির বাঁধার প্রতিবাদ করেন।
ভারতের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়, ১৯৭২ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুসারে সীমান্ত অপরাধ মুক্ত করার জন্য সীমান্তে বেড়া দেওয়া হবে। বাংলাদেশের পাল্টা যুক্তি হলো ওই চুক্তি অনুসারে সীমান্তের ১৫০ মিটার পর্যন্ত কোনো নিরাপত্তামূলক কাঠামো তৈরি করা যাবে না। এখন বিএসএফ সেটা মানছে না। ভারতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ২০১১ সাল এবং পরবর্তী ডিজি স্তরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত ছিল ওই ১৫০ মিটারের মধ্যেও সীমান্ত পোস্ট করা যাবে। জবাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি কোনো পোস্ট নির্মাণ করতে হয় তাহলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীর মধ্যে সহমতের ভিত্তিতে করতে হবে। একতরফা করা যাবে না।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জনাব মো. নুরুল ইসলামকে গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। দুই দেশের সরকার, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সব প্রোটোকল এবং চুক্তি মেনে ভারত সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বেড়া দেওয়ার কাজ করছে বলে হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে।
আন্তসীমান্ত অপরাধমূলক কার্যকলাপ, চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল এবং পাচারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সীমান্ত সুরক্ষিত করার জন্য কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্তে আলোকসজ্জা, প্রযুক্তিগত ডিভাইস স্থাপন এবং গবাদি পশুর বেড়া স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ পূর্ববর্তী সব সমঝোতা বাস্তবায়ন ও আন্তসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করে ভারত।