মানুষের প্রতিদিনের ব্যবহার করা সাবান, লোশন, ক্রিম, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, তেল, আফটার-শেভ লোশন, পারফিউমসহ বিভিন্ন প্রসাধনী প্রতিনিয়ত নকল করে বিক্রি হচ্ছে। এসব ভেজাল নকল কসমেটিকস পণ্য কিনে প্রতিমুহূর্তে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। নকল পণ্য কিনে একদিকে আসল পণ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তারা অন্যদিকে ভেজাল কসমেটিকস ব্যবহার করে চর্মরোগসহ নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানায়, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নকল কসমেটিকস কিনে প্রতারিত হয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে নিয়মিত অভিযোগ করছেন। ভুয়া পণ্য ব্যবহার করে অনেকে এরই মধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। নকল কসমেটিকস ব্যবহারের ফলে ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য পরিবারও দিন দিন আর্থিক সংকটে পড়ছে। ভেজাল কসমেটিকস পণ্য রোধে ভোক্তা অধিদপ্তর ঢাকাসহ ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। অভিযান চালানোর ফলে অসাধু চক্র ঢাকার বাইরে গিয়ে এখন ভেজাল পণ্য তৈরি করছে। সেখান থেকে নকল পণ্য তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বেশির ভাগ কসমেটিক পণ্যই নকল করা হচ্ছে। নকল পণ্য ব্যবহারকারীরা চর্মরোগসহ নানান রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব নিম্নমানের পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টির উপাদান লেড, ক্রোমিয়াম ব্যবহার করা হয়। ভোক্তা জানায়, এসব নকল কসমেটিক পণ্য বিপণন অ্যাসিড ছুড়ে মারারমতো অপরাধ। এসব পণ্যে স্কিন (ত্বক) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অবস্থার পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। তারা জানায়, বিদেশ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কসমেটিকস পণ্য আমদানি না করায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ না থাকায় দামের দিক থেকে ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে বৈধ ও অবৈধ আমদানিকারক, ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে, যেখানে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল জলিল বলেন, বাজার নিম্নমানের কসমেটিকস পণ্যে সয়লাব হলে তা মানুষের জীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। ভুয়া পণ্য ব্যবহার করে অনেকে এরই মধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য পরিবারেও দিন দিন আর্থিক সংকট বাড়ছে। এ জন্য দেশে বিশ্বমানের কসমেটিকস ও হোমকেয়ার পণ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। এতে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়বে।
প্রসাধনসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের লাখ লাখ ভোক্তা সরাসরি বিভিন্ন ছোট-বড় দোকান থেকে হরেক রকমের প্রসাধনী কেনেন। তাদের অনেকেই না জেনে, না বুঝেই নকল ও মানহীন ভেজাল পণ্য সংগ্রহ করছেন। ভোক্তাসংশ্লিষ্ট বৃহৎ এ খাতে যথাযথ নজরদারির অভাবে এক শ্রেণির অসাধু কারবারি মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞরা বলেন, নকল ও ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে মানুষ স্কিন ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মানসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার করা। বর্তমানে দেশি কোম্পানি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মানসম্মত কসমেটিকস পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মানসম্মত এসব কসমেটিকস পণ্য ব্যবহারে মানুষ উপকৃত হবেন। তথ্য বলছে, ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস ইন্ডাস্ট্রি (এফএমসিজিআই) সেক্টরের আকার উল্লেখযোগ্য হারে বড় হয়েছে, যা একে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পগুলোর মধ্যেও একটি করে তুলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে দেশ। রাজস্ব খাতে এটি প্রত্যাশিত, ২০২৭ সালের মধ্যে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১৬ শতাংশেরও বেশি। ২০২০ সালে বাংলাদেশে কসমেটিকস পণ্যের বাজার ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন। ২০২৭ সালে এর বাজার হবে ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে বিশ্বে এ পণ্যের বাজার ছিল ৮১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায়, নকল পণ্যের কারণে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিবছর ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার লস হয়। তাই দেশে বিশ্বমানের কসমেটিকস ও হোমকেয়ারের পণ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। এতে দেশের বাজার ছাড়িয়ে এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।