একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ কভার করা ভারতীয় চিত্র সাংবাদিক রবীন সেনগুপ্ত আর নেই। আজ মঙ্গলবার সকালে ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার জি.বি.পন্থ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি রেখে গেলে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে। দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এই জ্যেষ্ঠ চিত্রসাংবাদিক।
ভারতের উত্তর-পূর্বের সবচেয়ে প্রবীনতম চিত্রসাংবাদিক রবীন সেনগুপ্তের মৃত্যুর পরই সংবাদ জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া। মৃত্যুর খবর পেয়েই রবীন সেনগুপ্তের আগরতলার মধ্যপাড়ার বাসায় ছুটে যান ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা, ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করার পাশাপাশি রবীন সেনগুপ্তের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনাও জানান তারা।
শোক প্রকাশ করেন রাজ্যটির বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা, আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তারা, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
ত্রিপুরার তৎকালীন রাজার আর্জিতে ১৮৪০ সালে রবীন সেনগুপ্তর পূর্বপুরুষরা ঢাকা ছেড়ে আগরতলায় পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে শুরু করে। ১৯৩০ সালে আগরতলায় জন্মগ্রহণ করেন রবীন সেনগুপ্ত। ১৯১০ সালে তার বাবা এবং চাচা যৌথভাবে আগরতলায় ‘সেন অ্যান্ড সেন’ নামে প্রথম স্টুডিও খোলেন। আর বাবা-কাকার হাত ধরেই ফটোগ্রাফার হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন রবীন সেনগুপ্ত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ক্যামেরা হাতে কাজ করেছেন ভারতের এই নাগরিক। মুক্তিযুদ্ধে তার তোলা ছবি ভারত ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। স্বাধীনতার যুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালের ২০ অক্টোবর তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধে বন্ধু সম্মাননা’ পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন রবীন সেনগুপ্ত। একাধিক বইয়েরও রচয়িতা ছিলেন তিনি। গত বছরেই তার লেখা দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয় ঢাকায়। পেশার তাগিদেই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ব্রাজিলে ভ্রমণ করেছিলেন রবীন সেনগুপ্ত।
মার্কসবাদে বিশ্বাসী হলেও রবীন সেনগুপ্তের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। একইসঙ্গে প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু এবং ই.এম.এস.নাম্বুরিপাদেরও প্রশংসক ছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তার শেষ কৃত্য করা হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এনায়েত করিম